পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে নবীনগরের বিদ্যাকূট গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা দলের সূচনা হয়। পরবর্তীতে আরো অনেক দলের সৃষ্টি হয়। নব্বয়ের দশক পর্যন্ত দলগুলো সক্রিয় ছিল। কিন্তু, বর্তমানে যাত্রাশিল্প যেন ভুগছে। তাঁদের দুর্দশা এখন চরমে পৌঁছেছে।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ’ সংগঠন সরকারকে পাশে পেতে মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনে যাত্রাশিল্প পরিবার প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেওয়া এক ‘খোলা চিঠি’তে উল্লেখ করেন, ‘যাত্রা শুধু বিনোদন নয়, লোকশিক্ষার বাহনও বটে। সাম্য, সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্য দিয়ে জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি করেছে শিক্ষামূলক যাত্রাপালা। এতসব কল্যাণমূলক কাজের দাবিদার হয়েও যাত্রাশিল্প ও যাত্রাশিল্পীরা আজ জাতীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে না। যদিও বর্তমান সরকারের আমলে ২০১২ সালে একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও গেজেটভুক্ত হয়েছে, কিন্তু তার সুফল ভোগ করতে পারছেনা মালিক ও শিল্পীরা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জেলা প্রশাসন যাত্রানুষ্ঠানের অনুমতি প্রদানে বিরত থাকছে। যাত্রা একটি পেশাদারি শিল্প। হাজার হাজার মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে আছে এই শিল্পের মাধ্যমে। তবে এখন কেন যাত্রা পরিবার নিগৃহীত হবে। ভাতে-পানিতে কষ্ট পাবে। শিক্ষা আর চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে যাত্রা পরিবারের সন্তানরা। নীতিমালা হওয়ার পরেও কেন যাত্রা প্রদর্শনীর অনুমতি দেবেন না জেলা প্রশাসক?’
যাত্রাপালা পরিবার মানববন্ধনে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সাত দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হচ্ছে-
১. সহজে যাতে যাত্রা প্রদর্শনীর অনুমতি পাওয়া যায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জেলা প্রশাসককে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া ও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
২. এর আগে করোনাকালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে কিছু যাত্রাশিল্পীকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। হতদরিদ্র যাত্রা শিল্পীদের বাঁচাতে পুনরায় প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হোক।
৩. করোনাকালে যাত্রা মালিকরা যাত্রা মঞ্চায়ন করতে না পেরে পুঁজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় শিল্পকলা একাডেমিতে নিবন্ধনকৃত যাত্রা দলগুলো বাছাই করে অন্তত ২০টি যাত্রাদলের প্রতিটিকে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হোক।
৪. মুক্তিযুদ্ধের পালাসহ বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনভিত্তিক কয়েকটি যাত্রাপালার বিশেষ মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করা হোক।
৫. চলচ্চিত্র শিল্পীদের মতো যাত্রাশিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হোক।
৬. অসচ্ছল সংস্কৃতি কর্মীদের ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে যাত্রাশিল্পীদের জন্য পৃথক কোটার ব্যবস্থা রাখা হোক।
৭. বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে একটি জাতীয় যাত্রামঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হোক।