গণতন্ত্রকামীদের বিক্ষোভে টলছে মিয়ানমারের জান্তা। বুটে প্রাণ পিষে ফেলায় বিশ্বাসী ওরা। জনতার যৌক্তিক দাবির মুখে জান্তা ভর করেছে বুলেটে। এ পর্যন্ত দেশটির আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ বিক্ষোভকারী। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে এ তথ্য।
এ পরিস্থিতিতে উর্দি ছেড়ে মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবিক সদস্যও। তেমনই একজন মিয়ানমার পুলিশের ল্যান্স করপোরেল থা পেং। বুধবার (১০ মার্চ) রয়টার্স প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন খবর উঠে এসেছে।
থা পেং রয়টার্সকে বলেন, ‘(বিক্ষোভকারীদের) মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গুলি করো- এমন নির্দেশ পেয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছি আমি।’ কয়েকবার সেই নির্দেশ অমান্য করার পর তিনি পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খামপাত শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাবমেশিনগান থেকে গুলি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেদিন আমি নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করি।’ তার ভাষায়, ‘পরের দিন একজন অফিসার আমাকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, তুমি কি গুলি করতে পারবে?’ ২৭ বছর বয়সী এই ল্যান্স কর্পোরাল এমন নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর পুলিশ বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ১ মার্চ বাড়ি ছেড়ে থা পেং পরিবার ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এর ৩ দিন পর তিনি রাতে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন।
থা পেং রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এছাড়া আমার সামনে কোনও বিকল্প ছিল না।’ এ সময় তিনি সংবাদমাধ্যমে নিজের নামের অংশ বিশেষ শুধু জানান প্রাণের নিরাপত্তার জন্য। তবে তিনি রয়টার্সের কাছে তার পুলিশের চাকরি ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখান।
থা পেং বলেছেন, তার সঙ্গে ২৭ ফেব্রুয়ারি আরও ৬ জন সহকর্মী ঊর্ধ্বতন এক অফিসারের নির্দেশ অমান্য করেন। তবে বাকিদের নাম জানাননি তিনি।
এর আগে ১ মার্চ মিজোরামে আরেক মিয়ানমারের ল্যান্স কর্পোরাল ও তিন কনস্টেবল একই রকম বক্তব্য দেন রয়টার্সের কাছে। তারাও পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের বিষয়ে ভারতের মিজোরাম পুলিশ তথ্য নিয়েছে। এতে ওই চার ব্যক্তির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং তারা কেন পালিয়ে ভারতে গিয়েছেন তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এতে মিজোরাম পুলিশকে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় ওই চারজন বলেন, ‘দেশের বিভিন্নস্থানে অভ্যুত্থান বিরোধীদের ওপর গুলি করতে নির্দেশ দেয়া হয় আমাদের। গণঅসহযোগ আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেখানে আমরা নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে, যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছেন, তাদের ওপর গুলি করতে পারি না।’
উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গ্রেফতার করা হয় ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি ও দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে। অভ্যুত্থানের পর রাস্তায় নেমে আসে দেশটির জনগণ।