প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেওয়া উদ্যোগে আশ্রয় প্রকল্প -২ এ অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন সরকার। সম্প্রতি গণমাধ্যমে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক গৃহহীন ও ভূমিহীনদের দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে নানা ধরনের অবহেলা, অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র। সারাদেশে পৌনে ৯ লাখ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে গত বছর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
এই সব ঘরের বিষয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হবার পর সে বিষয়ে তদন্তে নামে প্রকল্প সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিরা।

ছবি: সংগৃহীত
তদন্তে এখন পর্যন্ত ৩৬টি উপজেলার অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে ইউএনও ও এসি ল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী পাঁচজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
এছাড়া এই তদন্তে আরও শতাধিক কর্মকর্তার নাম এসেছে বলে জানা গেছে। তবে এই দুর্নীতির সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগের সাথে সমন্বয়ে দেশের গরিব, অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এই প্রকল্প বাস্থবায়নের নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটিতে পৃথকভাবে কোনো অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগকে সমন্বিত করে ঘর বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কাজটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নেতৃত্বাধীন একটি কমিটিকে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন উপজেলা প্রকৌশলী, এসি ল্যান্ড, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

ছবি: সংগৃহীত
এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় সোয়া লাখ উপকারভোগীকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন জেলায় দেখা গেছে, নানা ধরনের অনিয়মে ধসে পরেছে নবনির্মিত ঘরগুলো। গতকাল ওই প্রকল্প দেখতে যান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের পেছনের মাটি পাশের খালে ধসে পড়ছে। খালটিতে বাঁশের পাইলিং করে প্রকল্পের বাড়িগুলো রক্ষার চেষ্টা চলছে।
এছাড়া কিছু ঘরে ফাটল দেখা গেছে। উপকারভোগীরা বলছেন, দুর্যোগসহনীয় ঘর এখন নিজেই ঝুঁঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দাবি, নতুন মাটি ফেলে তড়িঘড়ি করে ঘর নির্মাণ করায় পাশাপাশি দুটি ঘরে এই ফাটল দেখা দিয়েছে।
কিছু এলাকায় প্রথম দফায় নির্মিত ঘরগুলো নির্মাণে তেমন কোন বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়নি। কিন্তু প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় ৬০টি ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘরের দেয়ালে ও বারান্দার পিলারে ফাটল ধরেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পড়ছে বৃষ্টির পানি। গ্রিলের দরজা-জানাজার পাল্লাগুলো খুলে পড়ছে। বেশির ভাগ ঘরেরই গ্রিলের দরজা-জানালা ঠিকভাবে আটকানো যাচ্ছে না।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের যেসব ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা সরকারি খরচে মেরামত বা পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি আজ ৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে প্রধানমন্ত্রীর এসব উদ্যোগ ইতিহাসের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মহৎ উদ্যোগ এবং গভীর আবেগ ও ভালোবাসার কর্মসূচি বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।