fbpx

একজন শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশে নারী প্রগতি

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সরদার জার্জিস আলমের জন্ম ১৯৮৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পাবনায়। পড়েছেন ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বিএফ শাহীন কলেজে। তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গর্ভনেন্স ও পাবলিক পলিসি বিষয়েও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী জার্জিস। এখন সরকারি চাকুরিতে নিয়োজিত তিনি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তার প্রকাশিতব্য ‘একজন শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশে নারী প্রগতি’ বইয়ের পান্ডুলিপির কিছু অংশ বিবিএস বাংলা’র পাঠকদের জন্য উন্মোচন করেছেন।

বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা, যিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামী জীবনে বারবার উচ্চারণ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে উপলদ্ধি করেছেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীর উপস্থিতি সমানভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এটি না পারলে টেকসই ‍উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই উপলদ্ধি অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে নেই। এমনকি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত অনেক নেতা রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সমাজ উন্নয়নে নারীর অবস্থান ও ভূমিকা পরিস্কার করতে পারেন নাই।

রক্ষণশীল বা প্রগতিশীল কোনো নেতৃত্বের সাথে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের তুলনায় যাচ্ছি না। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বগুণে অনন্য ও স্বতন্ত্র। দীর্ঘসময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন ও বিরোধী দলে থাকাকালে তার গৃহীত সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য পর্যালোচনা করলে নারীর ক্ষমতায়ন বা অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলস সংগ্রামের একটি চিত্র ফুঁটে উঠে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সংগ্রাম তাকে একাই করে যেতে হয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভারতবর্ষ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অনেক মহীয়সী নারীর দ্বারা জননেত্রী শেখ হাসিনা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৮ মার্চ ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১২ উদ্বোধন অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি বলেন- ‘আমরা প্রেরণা পেয়েছি, চন্দ্রমূখী বসু, ফজিলাতুন্নেসা, বেগম রোকেয়া, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী, আশালতা সেন, সৈয়দ বদরুন্নেসা, বেগম সুফিয়া কামাল, লীলা নাগ, জোবেদা খাতুন চৌধুরীর মতো সমাজকর্মীদের থেকে। যারা ছিলেন বাঙালি নারী জাগরণের পথিকৃৎ।’

একজন শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশে নারী প্রগতি

ছবি : ইয়াসিন কবীর জয়।

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্য সমাজকর্মীদের মধ্যে বেগম রোকেয়ার ভূমিকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষভাবে গুরুত্ববহন করে। নারীর ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত যেখানে শিক্ষা, সেই নারী শিক্ষা নিয়ে বেগম রোকেয়ার অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ৮ মার্চ ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন- ‘আমরা যে নারীরা লেখাপড়া শিখেছি, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি, কিন্তু আমাদের যিনি এই পথ দেখিয়েছিলেন- বেগম রোকেয়া, আমি তার কথা স্মরণ করি। তিনি যদি আমাদেরকে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে না দিতেন তাহলে হয়তো নারী সমাজ এই সুবিধাটা পেত না।’

স্বাধীন বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে নিরলস সংগ্রামের মূল প্রেরণা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছেন শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে নারীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়াটা খুব সহজ ব্যাপার ছিলো না। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই নারী অধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২৭, অনুচ্ছেদ ২৮ এর ২ ও অনুচ্ছেদ ২৮ এর ৩ অর্ন্তভূক্তির মাধ্যমে।

১৯৫২ সালে একটি শান্তি মিশনে অংশগ্রহন করার জন্য বঙ্গবন্ধু চীন ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে কারাগারে বন্দীদশায় তিনি চীন ভ্রমণ নিয়ে একটি ডায়েরি লিখেন। সম্প্রতি যা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেও নারীর অধিকার নিয়ে তিনি অনেক কথা বলেছেন যা এখনও প্রাসঙ্গিক।

জননেত্রী শেখ হাসিনা নারীর অর্থনৈতিক অধিকার সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলতেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) আমাদের দেশি ভাষায় এভাবে বলতেন যে, একটা মেয়ে যদি দিন শেষে আঁচলে ১০ টা টাকা বেঁধে ঘরে আসতে পারে, ১০ টা টাকা হাতে বা আঁচলে বাঁধা থাকে তাহলে তাকে আর কেউ পরিবারের অবহেলা করতে পারে না।’

১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পনের পর বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশের নির্যাতিত নারীদের উদ্ধার করা হয়েছিল। দীর্ঘ পাশবিক নির্যাতনের ফলে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শারীরিকভাবে, এমনকি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন তারা। সেই সকল নারীদের চিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, জার্মানি থেকে নার্স ও ডাক্তার নিয়ে এসে বঙ্গবন্ধু তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং গঠন করেন ‘নারী পুণর্বাসন বোর্ড’। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে নির্যাতিত নারীদের পূণর্বাসনে বঙ্গমাতার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো সেই সকল নারীদেরকে সম্মানিত করার জন্য তাদেরকে ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অনেক পরিবারের বাবা-মা সামাজিক লোক-লজ্জার ভয়ে এই বীরাঙ্গনাদের পরিচয় দিতে অনিহা প্রকাশ করলে বঙ্গবন্ধু বলেন- ‘সকল বীরাঙ্গনার পিতার নামের জায়গায় লিখে দিবে শেখ মুজিবুর রহমান, ৬৭৭ নং বাড়ি, ৩২ নং সড়ক, ধানমন্ডি।’ একইভাবে পিতাকে অনুসরণ করে ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বাবা-মাসহ আপনজন হারানো অসহায় ৩ জন নারী- রুনা, রত্মা ও আসমাকে মাতৃপরিচয় দিয়ে গণভবনে বিয়ে দিয়েছিলেন এই মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী।

একজন শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশে নারী প্রগতি

বঙ্গবন্ধু শাসনামলে দৈনিক বাংলার বাণীর প্রতিবেদন। ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বর্তমানে আমরা যে একজন দৃঢ় প্রত্যয়ী প্রধানমন্ত্রীর প্রতিচ্ছবি দেখি, তার এই ব্যক্তিত্ব গঠনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রভাবও কম ছিল না । ৮ মার্চ ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নিভৃতে থেকে যিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন, সেই মহিয়সী নারী-আমার মা, বেগম ফজিলাতুনন্নেসা মুজিবকে আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’

২০২০ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আলোচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গমাতা সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি কখনও সাধারণ নারীদের মতো স্বামীর কাছে শাড়ী, গহনা বা কোনো কিছুই দাবী করেননি বা সংসার চালাবার ঝামেলাও তাকে (বঙ্গবন্ধু) দেননি। বরং পাশে থেকে প্রেরণা যুগিয়েছেন, শক্তি যুগিয়েছেন, উৎসাহিত করেছেন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যখন কোনো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন, তিনি অত্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যার জন্য আমরা আজকে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি।’

আমার কাছে মনে হয়, বেগম রোকেয়ার অনুপ্রেরণা ও বঙ্গমাতার সংগ্রামী জীবন কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে করেছে আত্মপ্রত্যয়ী ও দিয়েছে দৃঢ়চেতা মানসিকতা।

একজন শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশে নারী প্রগতি

‘শেখ হাসিনা বলেন, নারীকে সম্মান দেখানোর দায়িত্ব তাই পুরুষের সবচেয়ে বেশি।’ ছবি : ইয়াসিন কবীর জয়

ইতিহাসে আওয়ামী লীগ এ জনপদের সামনের সারির একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা প্রথম নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা তাদের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ২১ বছর শেষে ক্ষমতায় আসলে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ১৯৯৭ প্রণয়ন করে।

২০০৪ সালে প্রতিক্রিয়াশীল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গোপনে নারী উন্নয়ন নীতি আমূল পাল্টে ফেলে। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার সংশোধিত আকারে নারী নীতি-২০০৮ প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১’ প্রণয়ন করে। ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও নানা কুসংস্কারের শিকার হয়ে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ এদেশের নারী সমাজ যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রণীত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালাকে অবলম্বন করে নিজেদের মুক্তির আশ্বাস পাচ্ছিল, ঠিক তখনই এদেশের সকল ধর্মীয় দল একত্রিত হয়ে ইসলাম বিরোধীতার অভিযোগ তুলে নারী মুক্তির এই সনদের বিরোধিতা শুরু করে। বিস্ময়করভাবে এই নীতিমালার ৪৯ টি ধারার মধ্যে কোথাও কোনো ইসলাম বিরোধী শব্দ, তথ্য বা তত্ত্ব নেই। ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধীতা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে একাই কৌশলের সাথে মোকাবিলা করতে হয়েছে। নারী নীতি প্রশ্নে বিরোধী দল বা প্রথম সারির ছোট,বড় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তখন নারী সমাজের পক্ষে ছিল না। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর অবস্থান কতটুকু নারী নীতির পক্ষে ছিলো তা ভবিষ্যতে ইতিহাস সঠিক মূল্যায়ন করবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও মান উন্নয়নের জন্য প্রতিক্রিয়াশীল এই সমাজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এ যেন নি:সঙ্গ সংগ্রাম।

নারীর ক্ষমতায়নে স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই হেঁটেছেন শেখ হাসিনা। পাকিস্তান আমলে জুডিশিয়াল সার্ভিসে কোনো নারীকে পরীক্ষা দিতে দেয়া হতো না। স্বাধীনতা পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু জুডিশিয়াল সার্ভিসের পরীক্ষা নারী-পুরুষ সকলের জন্য উম্মুক্ত করে দেন। প্রথম ৭ জন নারী পুলিশ অফিসারের নিয়োগের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীতে নারী অফিসারদের পদচারণা শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৯০ জন নারী কর্মকর্তা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও প্রতিরক্ষা বাহিনীতে একমাত্র মেডিকেল কোর ছাড়া কোথাও নারীদের সুযোগ ছিল না। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমানবাহিনী ও বর্ডারগার্ডে নারীদের চাকরির সুযোগ দেওয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পিতৃপরিচয়ের প্রাধান্য স্বাভাবিক। কিন্তু সন্তান গর্ভধারণ থেকে শুরু করে তার প্রি-স্কুলিং, লালন-পালন, বেড়ে ওঠায় মায়েদের মেধা ও শ্রমের স্বাক্ষর বা স্বীকৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে একেবারেই অনুপস্থিত ছিল। সমাজ সংস্কারক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সন্তানের পরিচয়ে পিতার পাশাপাশি মায়ের নামও অর্ন্তভূক্ত করে সমাজে নারীর অবস্থান শক্ত করেন। ১৯৯৬ সালে মাতৃকালীন ছুটি ৪ মাসে এবং পরবর্তীতে তিনি এই ছুটি ৬ মাসে উন্নীত করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে যেখানে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিলো ১৫ টি, বর্তমানে তা ৫০ টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার কাঠামোতে ৩০ শতাংশ নারী আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে।

দেশের গার্মেন্ট শিল্পে নিয়োজিত শ্রমের দুই-তৃতীয়াংশের অধিক যেখানে নারী শ্রম সেখানে শুধুমাত্র শ্রমিকের পারিশ্রমিক ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করেই ক্ষান্ত হননি মাননীয় নেত্রী। তিনি গার্মেন্টস শিল্পে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের আবাসনের জন্য নির্মাণ করেছেন ১২ তলা বিশিষ্ট আধুনিক হোস্টেল।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ও পুঁজিবাদে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপনের ফলে আমাদের দেশসহ সারা দুনিয়ায় বিভিন্নভাবে নারীর প্রতি সহিংসতা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন বা প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সমাজের সকল শ্রেণিকে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। এ সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু আইন প্রণয়ন করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে নারীকে মুক্তি দেয়া সম্ভব নয়। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখবেন, যে নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, সে কারও মেয়ে বা কারও বোন। নারীকে সম্মান দেখানোর দায়িত্ব তাই পুরুষের সবচেয়ে বেশি।’

নারীর অধিকার, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের তাগিদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহিত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের সার সংক্ষেপঃ

] ৫৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তথ্য-প্রযুক্তিতে মহিলাদের প্রশিক্ষণের জন্য “তথ্য আপা” প্রকল্প শুরু।

] ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ইনভেস্টমেন্ট কম্পোনেন্ট ফর ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম।

] ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাইমুড়ি, কালিগঞ্জ, আড়াই হাজার ও মঠবাড়িয়া ট্রেনিং সেন্টার ও হোস্টেল নির্মাণ।

] ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপন।

] স্বল্প ব্যয়ে কর্মজীবী মহিলাদের জন্য ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা শহরে ৮ টি হোস্টেল পরিচালিত হচ্ছে।

] কর্মরত মহিলা গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ১২ তলা হোস্টেল নির্মাণ।

] ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৪ জেলায় মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ।

] ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন।

] ৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প।

] অতি-দরিদ্র ১০ লাখ ভিজিডি উপকারভোগী নারীকে আয় বৃদ্ধিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান।

] দেশের নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা ‘জয়িতা’র ব্র্যান্ডে দেশ-বিদেশে বিপণনের জন্য নারীবান্ধব আলাদা বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে।

] নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য দেশব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ কাযক্রম চলমান।

] মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস ও মানব সম্পদ উন্নয়ন, মাতৃদুগ্ধ পানের হার বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থায় পুষ্টি উপাদান গ্রহণের জন্য ৬ লাখ দরিদ্র গর্ভবতী মা ও ২ লাখ প্রসূতি মাকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান।

] সারাদেশে ৭৪ টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন।

] নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ৭ টি বিভাগীয় শহর ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৯টি ওয়ান-সটপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন।

] জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৬০ টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল স্থাপন।

] ঢাকায় ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি এবং ৭টি বিভাগীয় শহর ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভাগীয় ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে।

নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অগ্রদূত শেখ হাসিনার এই সংগ্রামের পথ কোনোভাবেই মসৃণ ছিল না। ৭৫ এ স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ও বিদেশ অবস্থানের কারনে বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয়ের অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার পর থেকে শুরু হয় এই মহীয়সী নারীর নি:সঙ্গ সংগ্রামের জীবন। দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়াটাও সহজ ছিল না। সেখানেও নিজ দলের কয়েকজন নেতার বিরোধীতার মুখে পড়তে হয় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রায় ভঙ্গুর একটি দলকে সংগঠিত করে ২১ বছর পর যখন তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, তখন এদেশের প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় দলগুলোর কাছ থেকে ফতোয়া আসতে শুরু করলো- ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’। যদিও একই প্রতিক্রিয়াশীলরা ৯১-৯৬ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে ‘হালাল’ হিসেবেই মেনে নিয়েছিলো। শেখ হাসিনা মূলত গ্রাম বাংলার নির্যাতিত, অবহেলিত, অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী নারী এবং অসহায় মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে তার রাজনৈতিক সংগ্রাম করেছেন এবং এখনও এই সংগ্রাম জারি রেখেছেন। যার কারণে তাকে নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়েছে। সমাজের হাজার হাজার অবহেলিত নারীকে দৃঢ়প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবার সাহস জোগাবে এই মহীয়সী নারীর জীবন সংগ্রাম।

Advertisement
Share.

Leave A Reply