ডায়াবেটিস এমন এক মরণব্যাধি, যা রোগীকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। শরীর যখন রক্তের সব গ্লুকোজ ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই শরীরে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস। এই রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির কিডনি, হার্ট, চোখ, লিভারের মত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ অকেজো করে দেয়। এছাড়া ডায়াবেটিস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হতে পারে, মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন কি নষ্ট হতে পারে কিডনিও।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বলছে, প্রতি ২ জনে ১ জন জানেন না তাদের ডায়াবেটিস আছে। তাদের অধিকাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দেশে এ মুহূর্তে ৮৪ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ৩০ বছরের বেশি বয়সের সবাইকে পরীক্ষা করলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর ৯৭ শতাংশই টাইপ-২। ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এই রোগের জন্য দায়ী। প্রাথমিক অবস্থায় যদি এটি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা নিয়ম মেনে চললেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। এমন কি তাদের ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় না।
নতুন একটি গবেষণা বলছে, ওষুধ ছাড়াই টাইপ টু ডায়াবেটিস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যুক্তরাজ্যের এক চিকিৎসকের দাবি, ‘খাদ্যাভাসে একটি মাত্র পরিবর্তনের মাধ্যমেই তিনি বিপুল সংখ্যক রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করেছেন।
সাউথপোর্টের নরউড সার্জারির চিকিৎসক ডেভিড উনউইন বলেন, ‘২০১২ সালের আগ পর্যন্ত টাইপ ২ ডায়াবেটিস ওষুধ ছাড়া নির্মূল হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবতেই পারিনি। তবে এই রোগ থেকে বাঁচতে দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ গ্রহণের বিষয়টি মানতে পারছিলাম না। এরপর আমি ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নির্মূলের বিষয়ে অধ্যায়ন শুরু করি।’
ডা. উনউইনের জানান, কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কাজ করে। এই উপায়ে ১০০ জনেরও বেশি টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগী রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনতে পেরেছি। ২০১৯ সালে ‘ব্রিটিশ জার্নাল অব জেনারেল প্র্যাকটিসএ লো-কার্বোহাইড্রেট ডায়েট কীভাবে ওষুধ ছাড়াই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সে বিষয়ে একটি ব্যবহারিক গাইডলাইন সম্পন্ন করেন ডা. উনউইন। তার গবেষণাপত্রটি গাইডলাইনস ইন প্র্যাকটিস সাইটেও প্রকাশিত হয়েছে।
উনউইনের সমীক্ষা বলছে, চিনি, শষ্য, মিষ্টিজাতীয় কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিবর্তে প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে কেউ যদি ক্যালরি মেপে প্রোটিন ও চর্বিজাতীয় খাবার খান, তাহলে নিমিষেই দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে ডায়াবেটিস। এমনকি কম কার্ব ডায়েট গ্রহণের ফলে ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন গ্রহণেরও প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি তিন উপায়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিহত করা যায়। যেমন- সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ব্যায়াম, অতিরিক্ত ওজন হ্রাস।
উনউইন ডায়াবেটিস আক্রান্তদের কিছু কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেন। যেমন- রুটি ও শস্য, মিষ্টিজাতীয় শাক-সবজি, পাস্তা, মধু, মিষ্টি দই, চিপস, দুধ, ভাত, চিনির ক্যান্ডি, চিনিযুক্ত খাবার, ময়দা, কুকিজ, কনডেন্সড মিল্ক, সিরিয়াল ইত্যাদি।
আর প্রতিদেনের খাদ্যতালিকায় কি থাকবে, সেটি সম্পর্কেও ধারণা দেন তিনি। ডায়েট চার্টে চর্বিযুক্ত মাছ,শাকসবজি, ভিটামিন সি, ডিম, ডুমুর, মটরশুঁটি, টকদই, চিয়া সিডস, করলা, মেথি ইত্যাদি খাবার রাখার পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ধূমপান এবং মদ্যপান বর্জন করার পরামর্শ দেন। এছাড়া নিয়মিত সুগারের লেভেল মেপে দেখা, নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়া, সারাদিনে অন্তত ঘণ্টাখানেক হাঁটার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি যে কোনো প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার অনুরোধ করেন।