শীত আমাদের পর্যটন মৌসুম। ক’দিন ছুটি পাই অফিস থেকে। অনেক দিন শহরের বাইরে যাওয়া হয় না। সমুদ্র খুব টানছিলো। গন্তব্য ঠিক করলাম কক্সবাজার।
জানা ছিল, করোনার দ্বিতীয় ধাপ চলছে। সঙ্গে নিয়েছিলাম মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির এড়িয়ে চলার সব উপকরণ।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে দেখি এক ভিন্ন দৃশ্য। কারও মুখেই মাস্ক নেই। হাজারো মানুষ একত্রে সমুদ্রে মেতেছে। কিন্তু কারও মুখেই নেই মাস্ক। সৈকত জুড়ে কোথাও চোখে পড়লো না হাত স্যানিটাইজিং এর কোনো ব্যবস্থা।

গণসংক্রমণের সতর্কতায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর গত আগস্ট মাসে খুলে দেওয়া হয় এ সৈকত। ছবি : সংগৃহীত
মানে কি কক্সবাজার এমন কোনো জনপদ যেখানে বিশ্বমহামারী হানা দেয়নি! গণমাধ্যম প্রতিবেদন তো তা বলছে না। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানতে পারি, বিভাগীয় শহরের বাইরে যেসব জেলায় এই রোগের সংক্রমণ বেশি তার মধ্যে কক্সবাজার একটি। গত আগস্ট নাগাদ এখানে প্রায় চার হাজার সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। কক্সবাজারের কয়েকটি এলাকাকে রেড জোনও ঘোষণা করা হয়েছিল। নভেম্বর নাগাদ এখানে করোনায় মারা গেছেন প্রায় ৪০ জন। নিহতদের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা। বাদ যায়নি প্রাণ বাঁচাতে শরণার্থী হওয়া রোহিঙ্গারাও।
তবে দেশের বিপুল মানুষ সমাগমের পর্যটন স্পটে কেন নেই কোভিড সতর্কতা?

মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাবসের বালাই নেই কক্সবাজার সৈকতে। ছবি : সংগৃহীত
গণসংক্রমণের সতর্কতায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর গত আগস্ট মাসে খুলে দেওয়া হয় এ সৈকত। সে সময় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাভেদ আহমেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, পর্যটক এবং যারা পর্যটকদের নানা ধরনের সেবা প্রদান করবেন তাদের জন্য কি করণীয় সে বিষয়ে একটি নির্দেশাবলী তৈরি করা হয়েছে। যা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
জাভেদ আহমেদ তখন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ কেউ যদি মাস্ক না পরে কোথাও যান তাহলে তাকে জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে। মোবাইল কোর্ট, টুরিস্ট পুলিশ এবং জেলার প্রশাসন একসাথে এ বিষয়টিতে কাজ করবে।’
টুরিস্ট পুলিশের ক’জন সদস্য চা খাচ্ছিলেন কলাতলী মোড়ে। তাদের মুখেও মাস্ক নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদের একজন বলেন, আল্লাহ’র ওপর ভরসা করে আছি। তিনিই মালিক। যদিও এটা ঠিক না। তবুও সমুদ্রের কারণে মনে হয় কক্সবাজারে কিছু হবে না।
যদিও বাস্তবতা পুরোই উল্টো এই কোভিড থাবার দ্বিতীয় পর্বে। সমুদ্রের ঢেউয়ে খেলতে থাকা মানুষ তীরে এলে কথা বলি তাদের সাথে।
সিলেট থেকে এসেছেন কামালউদ্দীন তার তিন মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে। তিনি বলেন, এমনিতে আমরা বাইরে বের হলে সবাই মাস্ক পরি। কিন্তু কক্সবাজারে এসে আর তা পরতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবে হাত স্যানিটাইজ করছি হোটেলে ফিরে।

সৈকতে ফুটবল খেলুড়েদের মুখেও ছিল না মাস্ক। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকার বাসাবো থেকে চার বন্ধু মিলে সমুদ্র স্নানে এসেছেন। সৈকতে বিচ ফুটবল খেলায় ব্যস্ত তারা। তাদের মুখেও মাস্ক নেই। কেন ? এর উত্তরে সরকারি কবি নজরুল কলেজের ছাত্র শহীদ আহমেদ বললেন, সমুদ্র পাড়ে খুব সুন্দর পরিবেশ। ঢাকায় সারাক্ষণ মাস্ক পড়ে থাকা হয়। মুখ ঘেমে যায় তবুও পরি। কিন্তু কক্সবাজারে এসে আর তা পরা হচ্ছে না। সাগরের বাতাস বাতাস খুব স্নিগ্ধ লাগে। এজন্য মনেহয় এখানে করোনা নেই। যদিও আমি মনে করি, এই বিপর্যয়ের সময়ে সবারই মুখে মাস্ক পরা ও হাত স্যানিটাইজিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত।
সৈকত ঘেঁষা বিলাশবহুল হোটেল সিগাল। এর রিজারভেশন অ্যাসোসিয়েট তিথি দাশগুপ্তা বললেন, আমরা কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি। আমাদের হোটেলে প্রবেশের জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক। আমরা হাত স্যানিটাইজিংয়েরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছি। কিন্তু হোটেলের বাইরে বা সৈকতে দর্শনার্থীরা কী করছেন সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়।

অনেকে মনে করছেন, মহামারী পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না পর্যটকরা। ছবি : সংগৃহীত
এ বিষয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসে যোগাযোগ করা হলে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পরিস্থিতি দেখে মনে হলো এই পর্যটন তীর্থ মহামারীর ঊর্দ্ধে আছে। মারাত্মক গণসংক্রমণের ঝুঁকি তাই থেকেই যাচ্ছে সমুদ্র পাড়ে।