কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার শেষে শত শত দর্শক যখন করতালিতে মেতে ওঠেন, সে সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এ ছবির মূল চরিত্রের অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। বাঁধনের এই আবেগী মুহুর্তে এক হয়েছে লাখো বাঙ্গালি। বুক চাপড়ে বলেছেন, এ আমার দেশ আমার ভাষার সিনেমা।
শুধু বাংলাদেশি নয় গোটা বাঙ্গালির কাছেই এ এক বড় গর্ব। আব্দুল্লা সাদের কান যাত্রা নিয়ে এখন আলোচনায় সরব দুই বাংলাই।
কানে বাঙ্গালির অংশগ্রহণ শুরু ১৯৫৪ সাল থেকে, আন্তর্জাতিক চিত্র পরিচালক ও প্রজোযক বিমল রায়ের হাত ধরে। তার নির্মিত ‘দো বিঘে জমিন’’ জিতে নিয়েছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ। পরবর্তীতে তার সুজাতা ও বিরাজ বহু ছবি দুটিও কানের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শিত হয়। খ্যাতিমান এই পরিচালকের জন্ম ঢাকার সূত্রাপুরে, তবে তারুণ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন কলকাতায়।
বিমল রায়ের পরেই, কানে সাড়া ফেলেন সত্যজিত রায়। বিংশ শতাব্দির অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই নির্মাতার ‘পথের পাঁচালী’ সিনামা, ১৯৫৬ সালে কানে ‘সেরা মানবিক দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। গুণী এই নির্মাতা এরপর কান উৎসবে মোটামুটি নিয়মিতই ছিলেন।
সত্যজিতের পর কানে বাঙ্গালির যাত্রায় ভাটা পড়ে। প্রায় দুই দশক বাদে, ১৯৮০ সালে কানের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শিত হয় মৃণাল সেনের ‘একদিন প্রতিদিন’। তিন বছর বাদে,‘খারিজ’ সিনেমা দিয়ে তিনি জিতে নেন জুরি প্রাইজ। এরপর ১৯৮৮ সালে সুনিশ্চিত সম্মান বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছিল গৌতম ঘোষের অন্তর্জলী যাত্রা।
বাংলাদেশিদের কাছে কান উৎসব প্রথম গর্ব বয়ে আনে ২০০২ সালে। এই বছরই মাটির ময়না বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসেবে, ফিপরেস্কি আন্তর্জাতিক সমালোচকদের পুরস্কার লাভ করে। এটি রচনা ও নির্মান করেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান পরিচালক তারেক মাসুদ।
সেই ধারাতেই আরও একবার ধ্বনিত হয় বাংলাদেশের নাম। ‘আন সার্টেন রিগার্ড’ ক্যাটাগরিতে এ বছর এই উৎসবে নির্বাচিত হল বাংলাদেশের সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। পরিচালক আব্দুল্লা সাদের সাফল্য গড়েছে বাংলাদেশি সিনেমার নতুন অর্জন। এর মধ্য দিয়েই কান উৎসবের মূল ক্যাটাগরিতে সরাসরি অংশ নিলো বাংলাদেশি কোনো সিনেমা।