জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে প্যারিস চুক্তির ‘কঠোর বাস্তবায়নের’ আহ্বান এবং বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন বন্ধে ধনী দেশগুলোকে প্রধান ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুই দিনের ‘পররাষ্ট্র নীতি ভার্চুয়াল ক্লাইমেট সামিট’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পূর্বে ধারণকৃত এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় করোনা মহামারি থেকে মুক্তি পেতে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার উপরও জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই গ্রহটিকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় আগামীকাল নয়, আজই। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তন কোনো নির্দিষ্ট সীমানায় আবদ্ধ নয়। যদি একটি দেশ থেকে কার্বন নির্গত হয়, তাতেও প্রতিটি দেশ প্রভাবিত হয়। আর তাই, প্রতিটি দেশকেই তার প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করতে হবে। আর বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন বন্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করা উচিত ধনী দেশগুলোকে, বিশেষ করে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোকে। যেখানে জি-২০ দেশগুলো ৮০ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী, সেখানে মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস কার্বন নির্গমনের জন্য নিচের দিকের ১০০টি দেশ দায়ী।
সরকার প্রধান তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘বাস্তবিক অর্থে বাংলাদেশ এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) কোন সদস্য রাষ্ট্রই উল্লেখযোগ্য কার্বন নির্গমনকারী নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও শুধু আমরাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আর প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশ ২ শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছে।’
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিটি দেশের জন্য এখন অনেক বড় হুমকি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মতো জলবায়ু দুর্বল দেশগুলোর জন্য একটি বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ুর এই পরিবর্তন। করোনা মহামারী শুরুর পর সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিই প্রধানত দায়ী সকল অসুস্থতার জন্য। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠতে না দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু, তাপমাত্রা বাড়ার জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন বন্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই করা হয়নি।
তবে এ সময় প্যারিস চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ভালো খবর যে, যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফিরে এসেছে। আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছি।’ গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তে জলবায়ু বিষয়ক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত করারও প্রশংসা করেন তিনি।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ায় ওই এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সরকারপ্রধান দেশের নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের কথা উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণে বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করছে, যা ৫ বিলিয়ন ডলারের সমান। এছাড়া, বাংলাদেশ ১২ হাজার সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ ও উপকূলে দুই লাখ হেক্টর ‘গ্রিন বেল্ট’ তৈরি করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, চলমান জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণতাকে ২০১৯ সালে `একটি বৈশ্বিক জরুরি পরিস্থিতি’ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ পার্লামেন্ট।