Advertisement
লতিফুল ইসলাম শিবলী’র অনেক পরিচয়। তিনি জনপ্রিয় গীতিকবি, বইমেলায় পাঠক প্রিয় উপন্যাস লেখক ও চিত্রনাট্যকার। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের সাথে তাঁর পথচলা ৯০ এর দশকের শুরু থেকে। এখন গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বরত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রখর সমাজ ও রাজনৈতিক বক্তব্য এই সৃষ্টিশীলকে আলাদা করে অন্যদের চেয়ে। গতকাল (২২মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জন মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে আছেন একাধিক শিশু ও নারী। আহত হয়েছেন শতাধিক। আগুনে ছাই হয়েছে ক্যাম্পের ১০ হাজারের বেশি মাথা গোজার ঘর। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার আগ্রাসনে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্য দেশে ঠাঁই নেয়া রাষ্ট্রহীন এ মানুষদের এমন করুণ পরিণতিতে সরব হয়েছেন লতিফুল ইসলাম শিবলী। এ প্রসঙ্গে বিবিএস বাংলা’য় তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর স্বভাবসুলভ অল্প কথায় স্পষ্ট বলা ভাবনা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুন। ৪ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে প্রায় ১০ হাজার প্লাস্টিকের ঘর পুড়ে ছাই। এখন পর্যন্ত ৩ শিশু আর নারীসহ ৭ জন মারা গেছেন।
সংবাদে জানলাম, অগ্নিকাণ্ড শুরু হয় শরণার্থীদের ১০ নম্বর ক্যাম্প থেকে। বিষয়টি আমাকে খুব ভাবিয়েছে রাত থেকে। কারণ এই বইমেলায় প্রকাশিত আমার উপন্যাস ‘ফ্রন্টলাইন’ এর মূল প্রেক্ষাপট এই ১০ নম্বর ক্যাম্প। উপন্যাস লেখার আগে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। কথা বলেছি এই নিপীড়িত সর্বহারাদের সাথে। চাক্ষুষ দেখেছি তাঁদের অসহায়ত্ব। কিছু না দেখে, না পড়ে, না শুনে তো উপন্যাসের মতো বিশাল প্রেক্ষাপট লেখা সম্ভব না। আমার লেখায় তাই তুলে ধরেছি নৃশংস ভূরাজনীতির মারপ্যাচে নতুন শতকের নিজস্ব ভিটামাটি হারানো বিশাল এই জনগোষ্ঠীর বৃন্তান্ত।
এমনিতে আমাদের দেশে অগ্নিকাণ্ড নিয়মিতই ঘটে। কারখানায় পোড়ে শ্রমিক। বস্তিতে পোড়ে ঘরহীন। এসব সংবাদ আমার মতো অনেককেই ব্যথিত করে। আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করি। আক্রান্তদের পাশে সাধ্য মতো দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ১০ নম্বর ক্যাম্পে আগুন ও মৃত্যু আমাকে অন্যভাবে বিষন্ন করেছে।

ছবি: আর ইয়াসিন আবদেল মানব
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শরণার্থীর দেশ এখন বাংলাদেশ। এত বিশাল ঘটনা আমাদের গল্প কবিতায় তেমন স্থান পায়নি, বরং এদেশের অনেক মানুষ তাদের নিয়ে উপহাস করে। আমি খুব কাছ থেকে শরণার্থীদের দুর্দশা দেখেছি। আর নিজের অক্ষমতায় অসহায় বোধ করেছি। কীভাবে ভুলে গেছি যে একদিন আমরাও শরণার্থী ছিলাম ?
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ১ কোটির অধিক আমরা শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। অর্থাৎ সে সময়ের জনসংখ্যার হিসাবে প্রতি ৭ জনের ১ জন শরণার্থী হয়েছিলাম আমরা।
আমার বিশ্বাস, হয়তো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আমরা সেই ঋণ পরিশোধ করছি। মনে হয়েছে, আমার কলম যদি এই মজলুমদের পক্ষে কথা না বলে তবে জবাবদিহিতার জন্য আল্লাহ’র বিচারের কাঠগড়ায় একদিন আমাকেও দাঁড়াতে হবে। লেখক হিসেবে ‘ফ্রন্টলাইন’ আমার সেই দায় মুক্তির উপন্যাস। নিশ্চয়ই মহান স্রষ্টা আমাকে এবং এই দেশকে রক্ষা করবেন।
আমার কাছে ভূগোলের চেয়েও বড় মানুষ । আমার কাছে দেশের জন্য মানুষ নয়, বরং মানুষের জন্য দেশ। দেশের মানচিত্রের সীমারেখা আছে। কিন্তু মানুষের হৃদয়ের মানচিত্রের কোনো সীমারেখা নেই।
Advertisement