কখনও ভিক্ষুক, কখনও পাগল, আবার কখনও চোর- বহুরুপে একই মানুষ। ছদ্ম বেশে মিশে থাকেন সাধারণের ভীড়ে। ক্ষণে ক্ষণে নিজেকে বদলে ফেলেন।

সাঈদ রিমন
ডাস্টবিন খুঁড়ে খাবার খোঁজার এই দৃশ্য অচেনা নয় এই শহরে। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি অভিনয় করছেন। অচেনা যুবকের কেন এই ছদ্ম বেশ? কি তার রহস্য !
তিনি সাঈদ রিমন। পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। শহুরে জীবনের গরীব-দুস্থ্য মানুষের প্রতি অবহেলা-অত্যাচার রিমনকে ভাবিয়ে তোলে। অসহায়দের পাশে থাকার অভিনব কৌশল তাকে আর দশ জনের চেয়ে আলাদা করেছে। রাজধানীর উত্তরাতে, নিজের বাসার আশ পাশকেই কাজের জায়গা করে নিয়েছেন। এয়ারপোর্ট রেলক্রসিং এলাকার মানুষের কাছে তিনি বন্ধু, সচেতনতার ফেরিওলা। নানা চরিত্র ধারণ করে মানবিক বিষয় তুলে আনার চেষ্টা করেন সাঈদ রিমন।
ছিন্নমূল মানুষের দুর্দশা, পাশে থেকে অনুভব করতে হয়ে যান তাদেরই এক জন। লকডাউনে কর্মহীন মানুষের কাতারেও দেখা যায় তাকে। বসে যান ভিক্ষার ঝুলি নিয়েও। বিবিএস বাংলাকে তিনি বলেন, ‘ আমি চেষ্টা করি মানুষকে সচেতন করতে। দীর্ঘ ১২ বছর ধরেই আমি এই কাজটা করে যাচ্ছি। নিজেকে বিভিন্ন চরিত্রে উপস্থাপন করে কাজটা আমি করি। এই ছবিগুলো তুলে আমার ফেইজবুকে পোস্ট করি, যাতে সামাজিক মাধ্যম থেকেও মানুষ সচেতন হতে পারেন।
পারফর্মিং আটসের মাধ্যেমে সচেতনতার এই কার্যক্রম চালাতে গিয়ে যেমন মানুষের ভালবাসা পান, আবার অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যেও পড়তে হয়। রিমন বলেন, ‘একবার মোবাইল ছিনতাকারীর চরিত্রটি করতে গিয়ে কিছু মানুষ মারমুখি হয়ে তেড়ে আসছিল। পরে তাদের ঘটনা বলার পরে রক্ষা পেয়েছি।’ শুধু কি তাই ভিক্ষুকের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে ত্রিশ টাকা ভিক্ষাও পেয়েছিলেন বলে জানান রিমন।
মাঠে ময়দানে রিমন কাজ করছেন, একই সাথে সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুক পেইজে নানা বিষয়ের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলছেন। সাঈদ রিমনের ছবি ব্যবহার করে মানুষকে সচেতন করছে পুলিশও।
সচেতন করেই থেমে থাকছেন না, নিজের সাধ্য মত খাদ্য, অর্থ ও জামাকাপড় দিয়েও গরীবের পাশে দাঁড়াচ্ছেন রিমন। তার সাথে কাজ করছে সমমনা আরও অনেকে।
রেলক্রসিং এলাকার এক পথশিশু বলে. ‘ স্যার আমাগো লাইগ্যা মেলা কিছু করে। সিএনজিতে কইরা খাবার লইয়া আহে, আমাগো দেয়, আবার আমাগো না পাইলে খুঁইজ্যা বাইর কইরা দিয়া যায়’।
সাধারণত পরিবার এ ধরনের কাজে সায় দেয়না। রিমনের হয়েছে উল্টো। তাঁর কাজের বড় উৎসাহ ঘরেই, মা ও স্ত্রী। পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে সুস্থ-সুন্দর ও বৈষম্যহীন সমাজ নির্মানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই তরুণ।