fbpx

কোরিয়ার পেরিলা বাংলাদেশে, ভাগ্য ফিরছে কৃষকদের

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বিজ্ঞ হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, এক তৈলে চাকা ঘোরে, আর এক তৈলে মন ফেরে… না তোষামোদ করা সেই চৌকষ তেলের কথা নয়, বলছি কোরিয়া থেকে আমদানি করা পেরিলা তেলের কথা। বাজারে যার বর্তমান মূল্য কেজিতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা।

দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ভারতে এর বহুবিধ ব্যবহারের পর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এর উচ্চফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। পেরিলা বা সাউ পেরিলা ওয়ান নামের এই তেলবীজে আছে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড, যা হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। ইউরিক এসিডের পরিমাণ শূন্য শতাংশ। এই তেলে আছে ৯১ শতাংশ অসম্পৃক্ত ফ্যাট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, মস্তিষ্ক, ত্বক ও চোখের জ্যোতি বাড়ায়।

পেরিলা নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে কাজ করছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হাসান। বিবিএস বাংলাকে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ায় পিএইচডি করতে যেয়ে পেরিলা সম্পর্কে জানতে পারি। আমার কাজটিও ছিল পেরিলায় ভিটামিন-ই এ ঘাটতি পূরণে জিনগত পরিবর্তন। কাজটি করতে গিয়ে আমি দেখলাম, ভোজ্যতেল হিসেবে পেরিলার অনেক গুণ। অন্যান্য যেকোন তেলের চেয়ে পেরিলা মানবদেহের জন্যেও খুব উপকারী। তাই প্রথম আমি এর বীজ বাংলাদেশে নিয়ে আসি। পরীক্ষামূলকভাবে দেখলাম বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এটি ভালোভাবেই ফলেছে। এরপর আমার অধীনস্ত যে পিএইচডি করছে, আবদুল কাইয়ুম, সে পেরিলা নিয়ে আরও গবেষণা করে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন।’

উপজেলা কৃষি অফিসার ও পিএইচডি ফেলো আবদুল কাইয়ুম মজুমদার বলেন, ‘এটি ফলাতে খুবই কম অর্থ, সময় ও জায়গার প্রয়োজন হয়। বীজতলাতে ৩০ দিন ও মুল জমিতে ৭০ থেকে ৭৫ দিন সময় লাগে। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ ফসল হতে সময় নেয় তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। কৃষক চাইলে জমিতে প্রধান ফসলের মাঝের সময়টাতে বাড়তি ফসল হিসেবে তুলে নিতে পারেন এটি। এছাড়া বাড়ির আঙিনা বা ফলের বাগানের মাঝে কিংবা পাহাড়ী অঞ্চলেও অনায়াসে করতে পারেন এই তেলবীজের চাষ।’

বাংলাদেশের ২০টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় সীমিত আকারে চাষ হচ্ছে পেরিলা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর বিপুল চাহিদা থাকায় কৃষি উদ্যোক্তাদের মধ্যে দিনদিন বাড়ছে পেরিলা চাষের আগ্রহ।

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধায় পেরিলা নিয়ে কাজ করা কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দ রোকনুজ্জামান তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘পেরিলা নিচু জমিতে চাষ করা যাবেনা। যেহেতু বর্ষাকালে ফলন হয়, তাই উঁচু জমিতে, যেখানে বৃষ্টি বা বন্যার পানি জমেনা, সেসব জমিতে পেরিলা চাষ করতে হবে। খুব একটা খরচ প্রয়োজন হয়না। জৈব সার ছাড়া আমি অন্য কোন সারও ব্যবহার করিনা। আলহামদুলিল্লাহ আমার খেতে ভালো ফলন হয়েছে পেরিলার।’

পেরিলার বীজ ছাড়াও এর পাতা সালাদ, আচার, চাটনি, ভর্তা ও বিভিন্ন খাবারে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর খৈল ৪০ শতাংশ প্রোটিন সমৃদ্ধ, যা পোল্ট্রি ফিডের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর।

কম খরচে অধিক ফলন ও উচ্চ আয়সমৃদ্ধ এই ফসল প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হাসান বলেন, ‘ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে কাজ করছে। কৃষকদের কাছ থেকে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। এটি যেহেতু দামী তেল, তাই দেশে উৎপাদন করে বাজারজাত করার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করতে পারি। আপনারা জানেন যে, বিদেশে এই তেলের প্রচুর কদর রয়েছে।’

সয়াবিন, সরিষা, সূর্যমুখীর মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষবাদ করা সম্ভব পেরিলা। এটি ভোজ্যতেলের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি বাড়াবে কর্মসংস্থান, বাড়বে রপ্তানি আয়ও। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে পেরিলার অপার সম্ভাবনা নিয়ে তাই আশাবাদী কৃষিবিদেরা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply