fbpx

গরিবের বন্ধু ডা. কামরুল ইসলাম, যার হাতেই হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

মাগুড়ার আবুল কালাম সরদার। ৪৯ বছর বয়সী আবুল কালাম ২০০৯ সালে রাজধানীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে স্বল্প খরচে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করেন। এখন পরিবার নিয়ে সুস্থ আছেন। এর আগে তিনি বহুবছর কিডনি জটিলতায় ভুগে বহু জায়গায় বহু টাকা খরচ করেও সঠিক চিকিৎসা পাননি।

আবুল কালামের মতো আরও অনেক অসহায় গরীব মানুষের আশ্রয় মিলেছে ডা. মো. কামরুল ইসলামের সিকেডি হাসপাতালে। তারা জানালেন, খুবই কম টাকায় এখানে সেবা পাওয়া যায়। ডাক্তার সাহেব খুব যত্ন করে রোগী দেখেন। যারাই কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করেছি, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।‘

যেখানে প্রতিবেশি দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যয় করতে হয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা, সেখানে সিকেডি হাসপাতালে সার্জারি ও ১৪দিন আইসিইউতে থাকার মোট খরচ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ট্রান্সপ্লান্টের পরেই দায়িত্ব শেষ হয়না ডা কামরুল ইসলামের। প্রতিমাসে কিডনি দাতা ও কিডনি গ্রহীতার চেকাপের জন্য নেন না কোন ভিজিট, নেন না নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ফিও।

রাজধানীর শ্যামলি ৩ নম্বর রোডের সিকেডি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা, গরিব কিডনি রোগীদের আশ্রয়দাতা ডা মো কামরুল ইসলাম। প্রতিদিন সারাদেশ থেকে আসা শতাধিক রোগী দেখার পাশাপাশি ২০০৭ সাল থেকে স্বল্প ব্যয়ে একের পর এক করে যাচ্ছেন কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট। দেশের একজন শল্য চিকিৎসক হিসেবে অর্জন করেছে হাজারেরও বেশি কিডনি প্রতিস্থাপন করার সম্মান, যা দেশের সর্বমোট কিডনি প্রতিস্থাপনের তিন ভাগের এক ভাগ।

সিকেডি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মো. কামরুল ইসলাম বিবিএস বাংলাকে বলেন, ‘এক হাড়ি ভাতের মধ্যে আমরা যদি দু’মুঠো চাল বেশি দিয়ে দেই, তাহলে তো আমাদের খুব বেশি খরচ হয় না। বাড়তি গ্যাস লাগে না, বাড়তি হাড়ি লাগেনা। কিন্তু একজনের খাবার হয়ে যায়। তেমনি আমাদের হাসপাতালাতে অন্য অপারেশনের আয়ের একটা অংশ আমরা এই কিডনি রোগীদের জন্য খরচ করি। কিডনি রোগ তো অন্যান্য রোগের মতো একবার দু’বার ডাক্তার দেখালেই ভালো হয়ে যায়না। সারাজীবন দেখাতে হয়। তাতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের সহায় বলে আর কিছু থাকেনা। সেকথা ভেবেই আমি এই উদ্যোগ নেই।

বিশেষায়িত এই হাসপাতালে আছে স্বল্প খরচে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা। ২২টি বেডে প্রতিদিন ৫৫ থেকে ৬০ জন পান ডায়ালাইসিস করার সুযোগ। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য স্বল্প খরচে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়াই ডা. কামরুল ইসলামের একমাত্র লক্ষ্য।

ডা. মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে কিন্তু অনেক টাকা লাগেনা। এর জন্য বাড়তি যন্ত্রপাতিও অনেক দামীনা। ১৩ বছর হয়ে গেছে, ১ হাজার ট্রান্সপ্লান্ট করে ফেলেছি। সেই একই যন্ত্রপাতি। এখন হয়তো জার্মান থেকে আমরা দামী কিছু যন্ত্রপাতি আনিয়েছি, সেটাও যে খুব খরচ সাপেক্ষ, তা কিন্তু না। ২ লাখ ১০ টাকাতেই কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের খরচ হয়ে যাচ্ছে। আমি যে কাউকে অনুদান দিচ্ছি, তাও কিন্তু না। হয়তো আমার পরিশ্রমটা বেশি হয়। সময়টা বেশি দিতে হয়। আমি কিন্তু আমার পকেট থেকে এক পয়সাও দিচ্ছি না। রোগীদের টাকা দিয়েই তাদের সেবা দিচ্ছি।‘

শুধু রোগীদের জন্য নয়, ভাবেন প্রতিষ্ঠানের আড়াইশো কর্মীর কথাও। বিনামূলে্য তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাসহ ভবিষ্যতের জন্যে বেতনের বাইরে জমাচ্ছেন ডিপিএস।

অত্যন্ত বিনয়ী ডা. কামরুল ইসলাম গাড়ী বাড়ী অর্থবিত্তে নয়, সুখ খুঁজে পেয়েছেন মানবসেবার প্রাণ প্রচুর্যে। স্বপ্ন দেখেন, দেশের সবশ্রেণির মানুষ পাবে সমান চিকিৎসা সেবার সুযোগ।

Advertisement
Share.

Leave A Reply