fbpx

জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি ও তৃতীয় বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিওতে তাঁর এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আমার পরম সৌভাগ্য যে, আপনাদের সকলের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে পারছি এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। এই শুভ মুহূর্তে আমি দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং একই সঙ্গে খ্রিস্টীয় ২০২১-এর শুভেচ্ছা।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ, নির্যাতিত মা-বোন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানান।

ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মহামারি প্রসঙ্গে বলেন, এক গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে সবাইকে বিগত ২০২০ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় সরকার টিকা নিয়ে আসার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সবাইকে আস্বস্ত করেন তিনি। টিকা পেলেই এই সঙ্কটে সম্মুখসারিতে থাকা যোদ্ধাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে তা দেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণে করোনায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন সরকারপ্রধান।

এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা মোট জিডিপি’র ৪.৩ শতাংশ। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা সে প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রেখেছি’।

তিনি বলেন,’জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গত একযুগে আমরা জনগণের জন্য কী করেছি, তা মূল্যায়নের ভার আপনাদের’।

এ বছর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বোচ্চ হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি ৫.২৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রাক্কলন অনুয়ায়ী এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৭.৪ শতাংশে।

দেশনেত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম যে দেশবাসীর সহায়তায় আমরা এই দুর্যোগ সফলভাবে মোকাবিলা করবো, ইনশাআল্লাহ। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে দেশবাসী এ দুঃসময়ে আমার এবং আমার সরকারের পাশে ছিলেন। আপনারা আমাদের এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন। এ ধরনের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভবিষ্যতেও আপনাদের পাশে পাবো – এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি’।

বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১২ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দ্য ইকোনমিস্টের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ’।

তিনি তাঁর ভাষণে আরো বলেন, ‘২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধশালী-মর্যাদাশীল দেশ। আমরা ২০২১ সালের পূর্বেই উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি। প্রত্যাশিত লক্ষে পৌঁছতে আমরা পথ-নকশা তৈরি করেছি। রূপকল্প ২০৪১-এর কৌশলগত দলিল হিসেবে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে’।

এ ভাষণে তিনি তাঁর সরকারের আমলে গৃহীত সব মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী, মহেষখালী এবং মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্পের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর মাধ্যমে দেশের সবগুলি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার ছাড়াও প্রত্যন্ত ৩১টি দ্বীপে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কয়েকটি ব্যাংক এবং সেনাবাহিনী স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর সেবা গ্রহণ করছে’।

রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ তুলে নেত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য ভাষাণচরে ১ লাখ মানুষের বসবাসের উপযোগী উন্নতমানের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে শুধু স্ব-ইচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাঠানো হচ্ছে’।

তিনি বলেন, ‘আইনের শাসন সমুন্নত রেখে মানুষের নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন আমরা তা করবো’।

ভাষণের শেষে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের এই অমানিশা দ্রুত কেটে যাক, মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করি। ততদিন আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযাপন করুন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন’।

Advertisement
Share.

Leave A Reply