দালালীর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে জাহাজ কেনার পরিকল্পনা ছাড়াও সাভারে একটি পার্ক তৈরিতেও বিনিয়োগ করেছেন বন্দরের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম। ২০০১ সালে টেকনাফ স্থল বন্দরে দৈনিক ১৩০ টাকা বেতনে চুক্তিভিত্তিক চাকরি নেন নুরুল। চাকরির ৯ বছরে অবৈধভাবে সে উপার্জন করেছেন ৪৬০ কোটি টাকা। বন্দরে দালালি, পণ্য খালাস, পণ্যের আড়ালে অবৈধ মালামাল এনে খালাসের মাধ্যমে এতো সম্পদ করেছেন তিনি।
১৪ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ভোরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি টাকা, জাল নোট ও ইয়াবাসহ তাকে আটক করে র্যাব।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ‘ওই চাকরি থেকে শুরু করলেও সময়ের পরিক্রমায় ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যান তিনি। চাকরির সুবাদে বন্দরের সংশ্লিষ্ট মানুষের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে নুরুল ইসলামের। একপর্যায়ে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। দালালি, পণ্য খালাস, পণ্যের আড়ালে অবৈধ মালামাল এনে অল্প সময়েই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান এই কম্পিউটার অপারেটর।’
জানা যায়, দালালিসহ অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ঢাকায় তার ছয়টি বাড়ি ও ১৩টি প্লটের মালিক এই নুরুল ইসলাম। এছাড়া সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে সর্বমোট ৩৭টি প্লট-বাগানবাড়ি-বাড়ি রয়েছে তার।
র্যাব মুখপাত্র আরও জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের যৌথ অভিযানে মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে নুরুল ইসলামকে আটক করা হয়। তিনি ২০০১ সালে টেকনাফ স্থল বন্দরে চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ১৩০ টাকা হারে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন। বন্দরে কর্মরত অবস্থায় তার অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে চোরাকারবারী, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালির কৌশল রপ্ত করেন। এরপর নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বন্দরে বিভিন্ন রকম দালালি সিন্ডিকেটে যুক্ত হন তিনি। এক পর্যায়ে ২০০৯ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে তার আস্থাভাজন একজনকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেন।
নুরুল টেকনাফ বন্দর কেন্দ্রীক দালাল সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতাতার সিন্ডিকেটে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। এই সিন্ডিকেটটি পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। এছাড়া কাঠ, শুঁটকি মাছ, বরই আচার, মাছের আড়ালে ইয়াবাসহ অবৈধ পণ্য নিয়ে আসতো।
চক্রটি টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করত। অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এর মধ্যে এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল স্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, তার নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯ টি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে।