fbpx

জেনে নিন,ফেসবুক ছাড়া কীভাবে সময় কাটাবেন

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

মনে আছে, এই তো ক’দিন আগে ফেসবুকের সার্ভার ডাউন হয়েছিল। তখন প্রায় সবারই মনে হয়েছিল, জীবনে যেনো কোনো আনন্দ নেই। সব থেকেও কী যেনো নেই। চারদিকে হাহাকার যেন। অথচ এই সার্ভার ডাউন ছিল মাত্র ছয় ঘণ্টা।

তাহলে বুঝতেই পারছেন, ফেসবুক আপনার জীবনের কতটা অংশ দখল করে আছে। এই ফেসবুকের কারণেই আপনি আপনার কাছের মানুষের সাথে মন খুলে কথা বলার সময় পান না। পরিবারকে সময় দিতে পারেন না। খাচ্ছেন ঠিকই। কিন্ত আরেক দিক থেকে সমানে মোবাইলের স্ক্রিনস্ক্রল করে যাচ্ছেন। আবার অফিসে কাজ করছেন, মন পড়ে আছে ফেসবুকের পাতায়। কে কী পোস্ট দিল, কেউ বার্তা পাঠিয়েছে কী না এগুলোই মাথার ভেতর ঘুরতে থাকে। আবার কোনো কাজ না থাকলেও বারবার মোবাইল হাতে নিতে ইচ্ছে করে। আপনি এবার বুঝতেই পারছেন, না চাইলেও আপনি কতটা এই অ্যাপের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন।

আরেক দল আছেন, যারা প্রায়ই ভাবেন আর ফেসবুক ব্যবহার করবেন না। ফেসবুক নিয়ে প্রতিটা চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হওয়ার পর, ফেসবুকের প্রতিটা কেলেঙ্কারির পরই হয়তো আপনি একবার করে ভাবেন, এবার ফেসবুক ছেড়েই দিবেন। অথবা, ফেসবুক হয়তো আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে এবং এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি বহুবার ছাড়ার চেষ্টা করেও ছাড়তে পারছেন না আপনি। বারবার অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাকটিভ করে দেন। এমন কি অ্যাপটিও আন ইনস্টল করে দেন নিজের মোবাইল ফোন থেকে। কিন্ত বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না। মায়ার নেশায় পড়ে আবারও ঠিকই ফিরে যান সেই রঙিন ভার্চুয়াল জগতে।

তবে আপনি যদি বদ্ধপরিকর হয়েই থাকেন যে আপনি আর ফেসবুক ব্যবহার করবেন না, তাহলে প্রথমে ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ভাবুন, ফেসবুক ছেড়ে কোথায় যাবেন।

শুধু তাই নয়, এখন অনলাইন বিজনেস বা অনেক জরুরি কাজেও ফেসবুকের দরকার হয়। তাই এই সব কাজ বিকল্প কোনো মাধ্যমে গিয়ে করতে পারবেন কি না, সেটিও বিবেচনায় আনুন।

আপনি যদি ফেসবুকের তথ্য ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক মডেল এবং এদের সাথে আসা ঝুঁকিগুলো নিয়ে যদি চিন্তিত বা বিরক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে ফেসবুকের মালিকানাধীন অন্য অ্যাপগুলো যেমন-মেসেঞ্জার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ থেকেও অব্যাহতি নিতে হবে আপনার। এটিও মাথায় রাখুন।

তবে আপনার যদি ধনুক ভাঙা পণ হয়েই থাকে, তাহলে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন।

ফেসবুকের বদৌলতে আপনার এই ভার্চুয়াল জগতে অনেক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। আপনি বিভিন্ন গ্রুপ, ফেসবুক পেইজে যুক্ত আছেন। যার পরিধি শুধু এই অনলাইন জগতেই সীমাবদ্ধ। আবার এই জগতেই আপনার অনেক বন্ধু, ফলোয়ারও তৈরি হয়েছে। ফলে আপনার সার্কেল অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। এখানে হয়তো আপনার বাবা-মা, প্রিয় বন্ধুরা ও অফিসের সহকর্মীরা আছেন। হয়তো আছেন ক্লাস ফাইভে হারিয়া যাওয়া বন্ধুটিও। এছাড়া এমন অনেক লোকজন আছেন যাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কই গড়ে উঠেছে এই পরিষেবায়।

তাই আপনাকে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে, সেটি হলো মোহ ত্যাগ করতে হবে। কিছু পেতে হলে কিছু অবশ্যই ছাড়তে হয়। তাই আপনার এই ভার্চুয়াল খ্যাতির মোহ আপনাকে ত্যাগ করতে হবে। ফেসবুক ছাড়তে চাইলে তাই আপনাকে কিছু সম্পর্ককেও ছাড়তে হবে, ছাড়তে হবে বিশেষ কিছু ডোপামিনের চাহিদাকেও। তবে প্রিয় মানুষের সাথে আপনি কিন্ত ফেসবুক ছাড়াই যোগাযোগ রাখতে পারেন।

নতুন গ্রুপ কোথায় পাবেন?
এমন একটি সময় ছিল, যখন টঙ দোকানে চায়ের কাপের টুং টাং শব্দ, বন্ধুদের গান আর হাসি আড্ডায় জমে উঠতো প্রাণবন্ত আড্ডা। একটু পর পর মোবাইলের দিকে তাকানোর কোনো প্রয়োজনই ছিল না। অথবা বন্ধুদের আড্ডায় সময়টুকু ছিল শুধুই বন্ধুদের জন্য বরাদ্দ। তবে বাস্তবতা হলো, এখন আড্ডায় বসেও আপনি অনবরত অন্য আরেকজনের সাথে চ্যাটিং করতে ব্যস্ত। বন্ধুদের আড্ডায় যেন ভাটা পড়ে গেছে। আড্ডা এখন চলে গেছে ভার্চুয়াল জগতে।

বর্তমানে ফেসবুকের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিচার হচ্ছে নানা ফেসবুক গ্রুপ। এই গ্রুপগুলোতে অপরিচিত লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে সহবস্থান করার সুযোগ পান আপনি।

ফেসবুক ত্যাগ করতে চাইলে তাই এটা মাথায় রাখতে হবে, বড় গ্রুপগুলোকে অন্য কোথাও আবার তৈরি করাটা প্রায় অসম্ভব। তবে ছোট গ্রুপগুলোর ক্ষেত্রে আপনি টেলিগ্রাম, সিগনাল, স্ন্যাপচ্যাট, গ্রুপমি,  হ্যাংআউটসের মতো কিছু অ্যাপ বেছে নিতে পারেন। এছাড়া যেসব বড় গ্রুপ আছে, তারা অন্য কোনো যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় কি না, তা খোঁজ নিতে পারেন।

বর্তমানে অনলাইন কমিউনিটি বা সম্প্রদায়গুলোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও সুস্থ জায়গা হচ্ছে রেডিট। যেকোনো আগ্রহ বা শখ নিয়েই রেডিটে কোনো না কোনো পাবলিক গ্রুপের সন্ধান পাবেন আপনি। শুধু তাই নয়, এখানে আপনি এলগরিদম ও ব্যবসায়িক মডেলের জন্য সেসব গ্রুপে প্রয়োজনীয় ও সুস্থ আলোচনাও চালাতে পারবেন।

এছাড়া বর্তমানে জটিল বিষয় এবং উপবিষয় নিয়ে আলোচনা চালাতে, ফাইল শেয়ার করতে এবং কথোপকথন চালাতে আরেকটি কার্যকর ওয়েবসাইট হচ্ছে স্ল্যাক।

তবে সম্প্রতি ডিসকর্ড নামের একটি অ্যাপ তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়। অডিও-চ্যাটের মতো অত্যাধুনিক ফিচার থাকা এই অ্যাপের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের অনলাইনে আড্ডা দেওয়া নতুন মাত্র পাচ্ছে।

আর যদি সময় পান, সপ্তাহে একদিন মন খুলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন। সপ্তাহে না হোক, মাসে অবশ্যই নিজের বাসায় বন্ধুদের দাওয়াত দিন। এমন কিছু করুন, যেখানে তাদেরও নজর যাতে ওই সময়ে ফেসবুকের দিকে না যায়। এভাবে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেন, ফেসবুক ছাড়াও জীবনে চলা সম্ভব।

ফেসবুক ছাড়া অবসর সময় কোথায় নষ্ট করবেন?
এটা কিন্ত সত্যি কথা, ফেসবুক হচ্ছে মূলত আপনার সময় নষ্ট করার জায়গা। এটি কখনোই প্রয়োজনীয় কাজ, আলোচনা চালাতে বা মানুষের সঙ্গে গভীর ব্যক্তিগত সংযোগ তৈরি করে না।

আপনি যদি মিম বা বিভিন্ন মজার মজার ভিডিও দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুক স্ক্রল করতে পছন্দ করেন, তাহলে টিকটকে আশ্রয় খুঁজতে পারেন। আর যারা ইন্সটাগ্রাম রিল দেখে সময় কাটান, তাদের জন্যও টিকটক একটি উপযুক্ত জায়গা। এসব রিলের অধিকাংশ ভিডিও আসে টিকটক থেকেই।

আর আপনার আগ্রহ যদি ছবি ও লাইফস্টাইল সংক্রান্ত বিষয়ে থাকে, তাহলে পিন্টারেস্ট বা হাউজ অনায়েসেই ব্যবহার করতে পারেন। আর ইউটিউব তো আছেই। সেখানেও অনায়েসেই সময় কাটাতে পারেন।

তবে সবচেয়ে ভালো পরামর্শ হচ্ছে আপনি বই পড়তে পারেন। আর যদি বই পড়তে ভালো না লাগে, তাহলে ছবি আঁকুন বা আপনার যদি বাগানের শখ থাকে, বাগানও করতে পারেন। আর কিছু যদি না পান, তাহলে কোনো প্রাণী বা পশু পালতে পারেন। আপনার অবসর সময় কিন্ত এমনিতেই কেটে যাবে।

খবর পড়বেন কোথায়?
বর্তমান সময়ে সংবাদের জন্য আমরা ফেসবুকের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বেশিরভাগ মানুষ ফেসবুক থেকেই প্রতিদিনের সংবাদ পেয়ে থাকে। তথাপি ভুল সংবাদও ফেসবুক থেকে ছড়ায় বেশি। অনেক সহিংসতা, দাঙ্গাও এই ভুল খবরকে কেন্দ্র করে ঘটে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশের পূজামণ্ডপে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো এর বাস্তব উদাহরণ।

তাই সংবাদের জন্য আপনার প্রথম গন্তব্য হওয়া উচিত আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যমটি। আপনি সেখান থেকেই সত্য ও নির্ভুল তথ্য পেতে পারেন। এছাড়া গুগল নিউজ বা অ্যাপল নিউজ থেকেও আপনি বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম থেকে সংবাদ পড়তে পারেন। বিশ্বস্ত সূত্র থেকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে এই দুটি অ্যাপ বেশ প্রসিদ্ধ।

আর আপনি যদি সেই সংবাদ নিয়ে কোনো আলোচনা করতে চান, তাহলে প্রতিটা নিউজ আর্টিকেলের কমেন্ট সেকশনে মন্তব্য করতে পারেন। অথবা টুইটার তো আছেই, সেখানেও অনায়েসেই পোস্ট করতে পারেন।

তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট

Advertisement
Share.

Leave A Reply