fbpx

নারীদের যুদ্ধ শেষ হবে কবে?

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

জান্নাতুন নাঈম প্রীতির অনেক পরিচয়। তিনি কবি, লেখক ও চলচ্চিত্রে শিল্প নির্দেশক ও নির্মাতা। জন্ম রাজশাহীতে। প্রীতি নিজেকে অবশ্য প্রকাশ করেন এভাবে, রঙে লিখি ও শব্দে আঁকি। সহজ বাংলায় চিত্রলেখা। চিত্রলেখার কাজটি ভালোবাসি বিচিত্রভাবে! স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই দিনে তিনি তাঁর নিজস্ব কিছু ভাবনা অল্প কথায় লিখেছেন বিবিএস বাংলা’র ‘মতামত’ বিভাগে।

আমার মতে, মুক্তিযুদ্ধ ও এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এ জনপদে সবচেয়ে নির্যাতিত হলো এ দেশের নারী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ড. নীলিমা ইব্রাহীমকে বীরাঙ্গনা নারীর তালিকা নষ্ট করে ফেলতে বলেছিলেন। কারণ এই দেশের বেশিরভাগ পুরুষ সে নারীদের ফিরিয়ে নেবেনা! মানে যুদ্ধের মধ্যে পাকবাহিনীর আর এদেশিয় রাজাকারদের আর যুদ্ধের পরে এদেশের সমাজের নিপীড়ন- এই দুই রোলার কোস্টারই যে মানুষদের ওপর দিয়ে গেছে তারা হলেন এই দেশের নারী। কিন্তু এখনও দিন পাল্টায়নি। এখনও ধর্ষণ হচ্ছে দেদারসে(গড়ে প্রতি ছয় ঘন্টায় ৩টির বেশি), কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় ঘর ছাড়া হতে হচ্ছে, উপাসনারত নারীকে হত্যা করা হচ্ছে, এখনও বিয়ে না হওয়ায় নারী হত্যার শিকার, এখনও বিয়ের পরে পড়াশোনা করতে চাওয়ার ইচ্ছায় নারীকে হত্যা করা হচ্ছে। হাত বা অন্য কোনো অঙ্গহানীর শিকার তো নারী প্রাত্যহিকই হচ্ছে। সুবর্ণজয়ন্তীর এইক্ষণে তাই প্রশ্ন, পঞ্চাশ বছরেও বাংলাদেশের নারীরা কি স্বাধীন?

মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে আমি ডাকতাম আম্মা। আম্মাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি কি জানো এখনও বীরাঙ্গনা নারীদের অনেকে ডাকে পাঞ্জাবীর বউ?
আম্মা আস্তে করে বলেছিলেন, জানি।

স্বাধীন বাংলাদেশে আমাকে এখনও একটি লেখার জন্য ধর্ষণের হুমকি শুনতে হয়। আমার কাছে এটি লজ্জার। এরকম কয়েকশো স্ক্রিনশট আছে যেখানে আমাকে কেবলমাত্র মত প্রকাশের জন্য খুঁচিয়ে ব্লেড দিয়ে হত্যা করতে চাওয়া হয়েছে। এই কি স্বাধীনতা?

আমি জানি না। আমি শুধু জানি, বাংলাদেশের নারীরা তাদের প্রাপ্য সম্মান পাননি, পাচ্ছেন না। এখনও নারীর প্রতি সহিংসতার ইনডেক্সে বাংলাদেশের নাম জ্বলজ্বল করে। সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় উপাসনালয়ে, বাড়িতে, ক্যাম্পে মেয়েরা নির্যাতিত হয়েছেন। যুদ্ধের পরও হচ্ছেন। কখনও ধর্মের নামে, কখনও রাজনীতির নামে, কখনও কর্তৃত্বের নামে।

একাত্তরে নিয়াজি নির্দেশ দিত, পূর্ব পাকিস্তানের নারীদের যত পারো রেপ করো, আমরা এই জাতির বংশ পরিচয়ই বদলে দেব। এখনও দেখি এমন নির্দেশ বদলায়নি। কেবল ব্যক্তি বদলেছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর লন্ডন টাইমস পত্রিকা তাদের হেডলাইনে লিখেছিল- If blood is the price of Independence, then Bangladesh has paid the highest price in history. কিন্তু এখনও আমার মাঝেমধ্যে খালি হাহাকার নিয়ে বলতে ইচ্ছে করে- This country is bleeding even after it’s independence!
আমি কেবল জানতে চাই- এই দেশের নারীদের যুদ্ধ শেষ হবে কবে? আর কতগুলো যুদ্ধের পরে এই দেশের মেয়েরা স্বাধীন হবে? নাকি ধরে নেব, এখানে মৃত্যু ভিন্ন নারীর মুক্তি নাই?

Advertisement
Share.

Leave A Reply