নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯২৪ সালের ১৯ অক্টোবর তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরে। ১৯৩০ এ কলকাতায় পাড়ি। মিত্র ইনস্টিটিউশনে শুরু কলকাতা পর্বের পড়াশোনা, এরপর বঙ্গবাসী। এরপর ভর্তি হন সেন্ট পলস কলেজ। ১৯৫১ সালে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দেন। তার প্রথম কবিতার বই ‘নীল নির্জন’ প্রকাশ পায় ১৯৫৪ সালে। এরপর একে একে প্রকাশ পেতে থাকে ‘অন্ধকার বারান্দা’, ‘সময় বড় কম’, ‘ঘুমিয়ে পড়ার আগে’, ‘আজ সকালে’। ১৯৭৪ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন তিনি। পেয়েছেন উল্টোরথ পুরস্কার, তারাশঙ্কর স্মৃতি পুরস্কার। ২০০৭ সালে তাকে ডক্টরেট সম্মানে ভূষিত করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিবিএস বাংলা’র পাঠকদের জন্য দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত কবির ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বই থেকে জনপ্রিয় ‘উলঙ্গ রাজা’ কবিতাটি রিপ্রিন্ট করা হলো।
সবাই দেখছে যে, রাজা উলঙ্গ, তবুও
সবাই হাততালি দিচ্ছে।
সবাই চেঁচিয়ে বলছে; শাবাশ, শাবাশ!
কারও মনে সংস্কার, কারও ভয়;
কেউ-বা নিজের বুদ্ধি অন্য মানুষের কাছে বন্ধক দিয়েছে;
কেউ-বা পরান্নভোজী, কেউ
কৃপাপ্রার্থী, উমেদার, প্রবঞ্চক;
কেউ ভাবছে, রাজবস্ত্র সত্যিই অতীব সূক্ষ্ম , চোখে
পড়ছে না যদিও, তবু আছে,
অন্তত থাকাটা কিছু অসম্ভব নয়।
গল্পটা সবাই জানে।
কিন্তু সেই গল্পের ভিতরে
শুধুই প্রশস্তিবাক্য-উচ্চারক কিছু
আপাদমস্তক ভিতু, ফন্দিবাজ অথবা নির্বোধ
স্তাবক ছিল না।
একটি শিশুও ছিল।
সত্যবাদী, সরল, সাহসী একটি শিশু।
নেমেছে গল্পের রাজা বাস্তবের প্রকাশ্য রাস্তায়।
আবার হাততালি উঠছে মুহুর্মুহু;
জমে উঠছে
স্তাবকবৃন্দের ভিড়।
কিন্তু সেই শিশুটিকে আমি
ভিড়ের ভিতরে আজ কোথাও দেখছি না।
শিশুটি কোথায় গেল? কেউ কি কোথাও তাকে কোনো
পাহাড়ের গোপন গুহায়
লুকিয়ে রেখেছে?
নাকি সে পাথর-ঘাস-মাটি নিয়ে খেলতে খেলতে
ঘুমিয়ে পড়েছে
কোনো দূর
নির্জন নদীর ধারে, কিংবা কোনো প্রান্তরের গাছের ছায়ায়?
যাও, তাকে যেমন করেই হোক
খুঁজে আনো।
সে এসে একবার এই উলঙ্গ রাজার সামনে
নির্ভয়ে দাঁড়াক।
সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে
জিজ্ঞাসা করুক:
রাজা, তোর কাপড় কোথায়?