fbpx
BBS_AD_BBSBAN
১লা ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৬ই অগ্রহায়ণ ১৪৩০ | পরীক্ষামূলক প্রকাশনা

পদ্মা সেতু : সমৃদ্ধ অর্থনীতির স্বপ্ন দেখছে দক্ষিণ বাংলা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

ডিসেম্বরের ১০ তারিখ। বিজয়ের মাসের এই সকাল অন্যান্য সকালের মতো নয়। এটি বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করার মতো। কেননা এই দিন পদ্মার এপার ওপার জনপদ মিলেমিশে একাকার হওয়ার পথের শেষ ধাপটি অতিক্রম করে। উত্তাল পদ্মার বুকে বসে সেতুর শেষ স্প্যান। পুরোপুরি দৃশ্যমান হয় দেশের গর্বের ৬.১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

প্রমত্তা পদ্মার বুকে এই স্বপ্নের সেতু দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য এক আশীর্বাদ। কেননা এতো দিন পর্যন্ত দক্ষিণের ২১ জেলার মানুষের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল ভঙ্গুর। অর্থনীতিতে যার প্রভাবও ছিল ব্যাপক।

একটি দেশে অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশের আমদানি, রফতানি, অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থা এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সবই নির্ভর করে এই যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর। তাই অর্থনীতিকে বলবান করতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব সর্বাধিক।

কীর্তিনাশা এই পদ্মার সঙ্গে ওপারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সংযোগ ছিল না। ফলে এই জেলার অর্থনীতি ও বাণিজ্য পিছিয়ে ছিল। পিছিয়ে পড়া এই ২১টি জেলা হচ্ছে- খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।

এখন এই পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে তা এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। শুধু দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা নয় বরং পুরো দেশের অর্থনীতিকে তা আরো গতিশীল করে তুলবে বলে মনে করেছেন সমগ্র দেশ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু অর্থনীতিতে যেমন প্রভাব ফেলবে, সহজ হবে মানুষের চলাচলও।

তারা মনে করছেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে বদলে যাবে ওই এলাকার অবকাঠামো, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির ধারা। একই সঙ্গে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ, বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ইতোমধ্যেই এই সেতুকে ঘিরে উদ্যোক্তারা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তারা আবাসন শিল্প, পর্যটন শিল্প, হাইটেক পার্ক, তাঁতপল্লীসহ অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মেগা প্রকল্পও গ্রহণ করছে।

পাশাপাশি এই সেতু দেশের অবকাঠামো, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির ধারা। একই সঙ্গে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ, বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হলে দেশে পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। ভবিষ্যতে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন ‘পদ্মা সেতুর সড়ক ও রেলপথ এই দুইয়ের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলকে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, রফতানি বাড়াতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি দেশের ভেতরে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে।’

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘স্বপ্নের এই সেতুকে মাথায় রেখে মানুষ নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে দিয়েছে। সামনে আরও নদী বন্দর, সমুদ্র বন্দর চালু হতে যাচ্ছে। মোংলা বন্দরেরও প্রসার  ঘটছে, ইকোনমিক জোন হচ্ছে। এ কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্পায়নের সুফল পেতে এখনই গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর ওপর জোর দিতে হবে।’

Advertisement
Share.

Leave A Reply