সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো যেন এখন নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে গেছে। আর দিন দিন এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
এই দুর্ঘটনা সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে। যেখানে অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন সড়কে ৩১৪টি দুর্ঘটনায় ৩৮৩ জন নিহত হয়েছিলেন, নভেম্বরে এসে এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৪১৭টি তে। আগের মাসের তুলনায় যা ১০৩টি বেশি।
আর এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৮২ জন। সে হিসেবে অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বর মাসে এই দুর্ঘটনা ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে সংস্থাটি এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল নভেম্বরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। এই সময় ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে ১৪১ জন প্রাণ হারান। এটি মোট প্রাণহানির ৩২ দশমিক ১১ শতাংশ এবং এর হার ৩০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। একই সঙ্গে দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী প্রাণ হারিয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন।
পাশাপাশি এ সময় নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ টি যেখানে নিহত হয়েছেন ৩ জন নিহত আর আহত হয়েছেন ৮ জন। আর ২৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩২ জন এবং আহত হয়েছেন ৭ জন।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১১১টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৩৭টি আঞ্চলিক সড়কে, ১১৩টি গ্রামীণ সড়কে, ৫১টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে (ফেরিঘাট, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ মাঠ ও ফসলের মাঠ) ৫টি সংঘটিত হয়েছে।
কারণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মুখোমুখি সংঘর্ষ ৯৭টি, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১০৫টি, পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া ১২৬টি, যানবাহনের পেছনে আঘাতে ৭৬টি এবং ১৩টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। জাতীয় মহাসড়কে সবসময় দুর্ঘটনার হার বেশি থাকলেও নভেম্বর মাসে জাতীয় মহাসড়কের তুলনায় আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, মোটরসাইকেল চালক ও পথচারী নিহতের ঘটনা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে অজ্ঞতা, অবহেলা এবং ট্রাফিক আইনের প্রয়োগহীনতা এর প্রধান কারণ বলেও তারা উল্লেখ করেছে।