মরমী কবি, গীতিকার, ভাটি বাংলার সাধক হাসন রাজার ৯৮ তম প্রয়াণ দিবস আজ রবিবার (৬ ডিসেম্বর)। ১৯২২ সালে তিনি পরলোক গমন করেন।
১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সিলেটের সুনামগঞ্জ শহরের লক্ষণশ্রীর ধর্ণাঢ্য জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী।
হাসন রাজার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। মাত্র পনেরো বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হলে সংসার ও জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। যৌবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৌখিন ও ভোগবিলাসী, কিন্তু পরিণত বয়সে সব বিষয়-সম্পত্তি বিলিবণ্টন করে দরবেশ জীবন যাপন করেন। তাঁরই উদ্যোগে সুনামগঞ্জ হাসন এম ই স্কুল,অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও আখড়া স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী ছাত্রের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তিনি করতেন।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় হাসন রাজার বিচরণ ছিল। তাঁর গবেষণা-সাধনা ও শিল্পকর্ম ছিল গণ-কল্যাণমুখী। নিজস্ব চিন্তা চেতনায় আবহমান বাংলার কৃষ্টি শিল্প সংস্কৃতি ধারণ করে তিনি বাংলার গৌরবকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
তিনি ছিলেন সুরের সাধক। ‘একদিন তোর হইব রে মরণ রে হাসন রাজা’, ‘মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়ারে কান্দে হাসন রাজা মন মনিয়া রে’, ‘প্রেমের বান্ধন বান্ধরে দিলের জিঞ্জির দিয়া’, ‘রঙের বাড়ই রঙের বাড়ই রে’, ‘আমি না লইলাম আল্লাজির নাম রে’, ‘লোকে বলে ঘরবাড়ি ভালানা আমার’, ‘আগুন লাগাইয়া দিলও কুনে হাসন রাজার মনে,’ সহ জনপ্রিয় অসংখ্য গানের রচয়িতা এই মরমী সাধক।
তিনি একদিকে যেমন মানবতার চিরন্তন বাণী সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন, অপর দিকে তাঁর মাঝে আধ্যাত্মিকতার ছাপও পরিলক্ষিত হয়েছে। তাঁর গায়কীতে সকল ধর্মের বিভেদ অতিক্রম করে মাটি ও মানুষের গানও খুজে পাওয়া যায়।
শুধু তাই নয়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৫ সালে কলকাতায় এবং ১৯৩৩ সালে লন্ডনের হিবার্ট বক্তৃতায় তাঁর দুটি গানের প্রশংসাও করেছিলেন।
সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারে হাসন রাজার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ‘মিউজিয়াম অব রাজাস’ নামের এক জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। এই জাদুঘরে দেশ বিদেশের দর্শনার্থীরা হাসন রাজা ও তার পরিবার সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে প্রতিদিন ভিড় করেন।
শুধু তাই নয়,সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়ায় এলাকায় সুরমা নদীর কোল ঘেঁষা হাসন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে পারিবারিকভাবে হাসন রাজা মিউজিয়াম করা হয়েছে। এখানে কবির ব্যবহৃত কুর্তা, খড়ম, তরবারি, পাগড়ি, ঢাল, থালা, বই ও নিজের হাতের লেখা কবিতার ও গানের পান্ডুলিপি প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। প্রয়াণ দিবসে অতল শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি।