fbpx

ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলো

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

শিল্পের সঙ্গে সখ্যতা মানুষের জন্মলগ্ন থেকেই। নতুন কিছু সৃষ্টির নেশায় ছুটে চলেই বর্বর সমাজ থেকে পরিবর্তন ও বিবর্তনের ধারা বেয়ে আজকের এই সভ্যতা। শিল্প সংস্কৃতির হাত ধরেই মেধা-মননে নিজেকে অন্যপ্রণীর থেকে আলাদা করছে মানুষ।

মানুষের সেই সৃষ্টিশীলতারই প্রকাশ ভাস্কর্য শিল্প। দেশে দেশে কালে কালে এই সব ভাস্কর্য শুধু শিল্পীর ভালো লাগার অনুভূতিই প্রকাশ করছে না, তুলে ধরছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবিও। বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে ভাস্কর্যের নিদর্শন নেই।

ভাস্কর্য শিল্পে পিছিয়ে নেই বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোও। কাতার, সৌদি আরব, উজবেকিস্তান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, ইরান, ইরাকসহ অনেক দেশেই দৃষ্টিন্দন এই শিল্পের দেখা মেলে।

সবার আগেই বলছি ইসলামের পূণ্য ভূমি সৌদি আরবের ভাস্কর্যের কথা। দেশটিতে উট এবং ঘোড়ার প্রচলন বেশি থাকায় ভাস্কর্য শিল্পেও এর প্রভাব পড়েছে। বাণিজ্যিক রাজধানী জেদ্দা নগরীতে আছে উটের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। এছাড়াও রয়েছে মুষ্টিবদ্ধ হাত, হাংরি হর্স, মানব চোখসহ মনকাড়া সব নিদর্শণ।

ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলো

মুষ্ঠিবব্ধ হাত, জেদ্দা, ছবি: সংগৃহীত

উপসাগরীয় দেশ কাতারের রয়েছে ব্যয়বহুল ও চোখকাড়া ভাস্কর্য ও স্থাপত্য। দেশটিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য – ‘হারনেসিং দ্য ওয়ার্ল্ড’। যার অর্থ হচ্ছে বিশ্বের সাথে সংযোগ। রাজধানী দোহায় ‘কাতারা আম্পি থিয়েটার’-এর সামনে নারী অবয়বের এই ভাস্কর্যে প্রকাশ করা হয়েছে গোটা পৃথিবীকে সংযোগ স্থাপনের বার্তা।

ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলো

হারনেসিং দ্য ওয়ার্ল্ড, দোহা, ছবি: সংগৃহীত

মুসলিম প্রধান দেশ ইরাক। এখানে বিভিন্ন রাস্তার পাশে দেখা মিলবে ভাস্কর্যের। বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে ডানার ভাস্কর্যটি সবার নজর কাড়ে। আল-মনসুর শহরে আছে মনসুরের একটি বিশাল ভাস্কর্য। দেখা মিলবে অনেক সৈনিকের ভাস্কর্য। এক সময় রাস্তায় রাস্তায় ২৪ বছর রাষ্ট্র-ক্ষমতায় থাকা সাদ্দাম হোসেনের ভাস্কর্যে দেখা মিলতো। ক্ষমতার পালা বদলে এখন অবশ্য সেগুলো আর নেই।

ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলো

ভাস্কর্যটির নাম মুভমেন্ট টু সেইভ ইরাকি কালচার, বাগদাদ, ছবি: সংগৃহীত

ইরানের সংস্কৃতি, পারস্যের সংস্কৃতি হিসেবেও পরিচিত। শিল্প-সাহিত্য-ঐতিহ্যে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন, সমৃদ্ধ ও সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী দেশ এটি। এখানকার স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের  গঠনগত ও নান্দনিক ভিন্নতা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ের জনপ্রিয় কবি সাহিত্যিকদের স্মরণেও নির্মাণ হয়েছে ভাস্কর্য। রয়েছে কবি ফেরদৌসি, ওমর খৈয়াম, নাদির শাহর মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিদের ভাস্কর্য।

ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলো

ইরানে রয়েছে কবি ফেরদৌসির ভাস্কর্য। ছবি: সংগৃহীত

 

ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ ইন্দোনেশিয়া। ত্রোয়োদশ শতাব্দি পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া ছিল হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মানুসরী অধ্যুষিত দেশ। এর পরই মুসলমানদের আগমন। ষোড়শ শতাব্দীতে দেশটির প্রধান ধর্ম হয়ে যায় ইসলাম। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতি ক্রমেই ছাপিয়ে গিয়েছিল বৌদ্ধ আর হিন্দুপ্রধান এ অঞ্চলে। এরপর ধাপে ধাপে ইউরোপীয়দের আগমন। দেশটিতে ব্রিটিশ আর ডাচরা তাদের সাম্রাজ্য স্থাপন করলেও ধর্ম ও সংস্কৃতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। দেশটির বিভিন্ন স্থাপনা ও শিল্প নিদর্শনে রয়েছে ভারতীয় ও চীনা সংস্কৃতির ছাপ।  নানা রকম শিব, বৈষ্ণব, গণপতি ও বৌদ্ধ মূর্তিসহ ভাস্কর্য শিল্পে সমৃদ্ধ গোটা দেশ। এই ভাস্কর্যগুলো যেমন দেশটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে, তেমনি বাড়িয়েছে পর্যটকদের আনাগোনাও। এখানেই রয়েছে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ভাস্কর্য। বালি দ্বিপের এই ভাস্কর্যটির নাম ‘ গারুদা বিষ্ণু কাঞ্চন’। ১২১ মিটার উঁচু ভাস্কর্যটি চীনের ‘স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ’র চেয়ে ছোট। তবে মিয়ানমারের ‘লেকিয়ুন সেক্কিয়া বুদ্ধ’ মূর্তিটির চেয়ে বড়।

ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলো

গারুদা বিষ্ণু কাঞ্চন ভাস্কর্য, বালি, ছবি: সংগৃহীত

 

 

এছাড়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান বাংলাদেশেও রয়েছে নানা রকম ভাস্কর্য। এ সব ভাস্কর্য  বহন করছে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরব গাঁথা। বিশ্বের নানা প্রান্তের শিল্পানুরাগী ও পর্যটকদের আকর্যণের কেন্দ্রবিন্দুও হয়ে উঠছে এই সব ভাস্কর্য।

ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলো

তুরস্কে মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য
ছবি: সংগৃহীত

ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলো

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল খোমেনির ভাস্কর্য। ছবি : সংগৃহীত

 

Advertisement
Share.

Leave A Reply