fbpx

ভ্যাকসিনকে পৃথিবীর সর্বত্র সহজলভ্য করার আবেদন

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে একটি বৈশ্বিক সর্বসাধারণের সামগ্রী হিসেবে ঘোষণা করতে চলতি বছরের জুনে নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাপী এক প্রচারাভিযান শুরু করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ২৪ জন নোবেল লরিয়েট এবং ১২৫ জন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বগণ একাজে তাঁর সাথে সমবেত হন। আসন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধানদের European Union সম্মেলন, The TRIPS সম্মেলন, WTO সম্মেলন ও African Union সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রফেসর ইউনূসের শুরু করা ও Avaaz কর্তৃক সমর্থিত এই পিটিশনে ১১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ৯,১৩,৪৫৩ মানুষ স্বাক্ষর করেছেন যেখানে তাঁরা তাঁদের সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানদেরকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা প্রযুক্তিকে এর কারিগরী বিষয়গুলো শেয়ার করার মাধ্যমে ও এগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানা সংক্রান্ত বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত রেখে এই ভ্যাকসিনকে পৃথিবীর সর্বত্র সহজলভ্য করার আবেদন জানিয়েছেন।

Avaaz কর্তৃক বিশ্বব্যাপী প্রচারিত এই পিটিশনে ঔষধ কোম্পানীগুলোকে স্বেচ্ছামূলকভাবে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানা ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করার মাধ্যমে এই ভ্যাকসিনকে পৃথিবীর সর্বত্র, সবচেয়ে কম খরচে ও সবচেয়ে কম সময়ে সকল মানুষের জন্য সহজলভ্য করার জন্য আহ্বান জানান হয়েছে।

প্রফেসর ইউনূস মন্তব্য করেছেন যে, ইউরোপ ও আমেরিকার ধনী দেশগুলো এরই মধ্যে এই ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় সবটাই তাদের জনগণের স্বার্থে তাদের নিজেদের দখলে নিয়ে গেছে এবং এর ফলে নিম্ন আয়ের দেশগুলো ভ্যাকসিন পাবার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এর ফলে COVAX এর মতো প্রশংসনীয় বর্তমান পদ্ধতিতেও ২০২১ সালের শেষে পৃথিবীর সর্বত্র এই ভ্যাকসিন পৌঁছানো যাবে না। উত্তর গোলার্ধকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস এর এই জরুরী সতর্কবার্তা বোঝানো যাচ্ছে না যে, ‘সকলকে নিরাপদ না করা পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়।’

প্রফেসর ইউনূস আরো বলছেন যে, সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হলে সকল দেশকে জরুরিভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সামগ্রীসমূহ সংগ্রহ করতে হবে, সর্বনিম্ন খরচে সকলের জন্য কার্যকর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিপূর্ণদের – যেমন স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্ক মানুষদেরকে যতো দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন দিতে হবে। এজন্য প্রায় ১০০টি দেশ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ও এর চিকিৎসা প্রযুক্তির প্যাটেন্ট ও বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানার উপর একটি ব্যাপক-ভিত্তিক সাধারণ স্বত্বত্যাগ জারি করতে এ মাসে WTO-তে একটি প্রস্তাবে সমর্থন দিতে যাচ্ছে। HIV/AIDS মহামারীতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা, যেখানে বিপুল মানুষ নিরর্থক প্রাণ দিয়েছে, এই প্রস্তাবের কো-স্পন্সর। কোভিড ভ্যাকসিনকে প্যাটেন্ট-মুক্ত করতে একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি এই ভ্যাকসিন একটি বৈশ্বিক সর্বসাধারণের সামগ্রী – এই বার্তা পরিষ্কারভাবে পৌঁছে দিয়ে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে দিতে পারে।

প্রফেসর ইউনূসের এই উদ্যোগ যে বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছে তা হলো, মানুষের জীবন রক্ষার মতো একটি মৌলিক প্রশ্নে কোন ‘উত্তর-দক্ষিণ’ বিভাজন কাম্য নয়, বিশেষত সেসব দেশের ক্ষেত্রে যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যার বড় অংশ বাস করে। এখন সময় এসেছে G-20 নেতাদের এটা প্রমাণ করা যে, কাউকে পেছনে ফেলে না রাখতে ‘চেষ্টার কোনো ত্রুটি’ না করতে তাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। WTO -তে উত্থাপিত প্রস্তাবটির সমর্থনে তাঁদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য যে, এ বছরের জুন মাসে তাঁর প্রথম আবেদনের পর প্রফেসর ইউনূস People’s Vaccine Alliance-এ যোগ দেন এবং জাতি সংঘ, বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানগণ এবং সিদ্ধান্ত প্রণেতাদের কাছে পৌঁছাতে বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান যেমন UNAIDs, Oxfam ও অ্যালায়েন্সভুক্ত ২০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কাজ করছেন। কোভিড-১৯-কে একটি বৈশ্বিক সর্বসাধারণের সামগ্রী হিসেবে ঘোষণা করার লক্ষ্যে জাতি সংঘ সাধারণ পরিষদে একটি সিদ্ধান্তের খসড়া প্রণয়নে অ্যালায়েন্স একযোগে উদ্যোগ নিয়েছে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply