ভারতের মণিপুর রাজ্যে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানকার তিনটি বড় হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে ৯৬টি মরদেহ। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মণিপুরে জাতিগত সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১৭৫ জন নিহত হয়েছেন এবং অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। কিন্তু এসব মরদেহ নিতে এখন পর্যন্ত কেউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ভয়ে লোকজন হাসপাতাল থেকে স্বজনদের মৃতদেহ নিচ্ছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক গঠিত প্রাক্তন বিচারপতিদের একটি কমিটি রাজ্য সরকারকে মৃতদের একটি তালিকা প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছে। এরপরেও যদি কোনো মরদেহের দাবিদার এগিয়ে না আসেন তাহলে সসম্মানে অন্তিম সংস্কার করে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মণিপুর রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই এবং কুকি উপজাতিদের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গা বেধেছে। এই গোষ্ঠী দুটি রাজ্যের দুটি ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাস করে। দাঙ্গার পর এখন পরিস্থিতি এমন যে, এক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অন্য গোষ্ঠীর ভূখণ্ডে যেতে পারে না। সমগ্র মণিপুর রাজ্য জাতিগত ভিত্তিতে ভাগ হয়ে গেছে। সেখানে এখনো সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
জাতিগত সহিংসতায় নিহত ৯৬ জনের মরদেহ মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের দুটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ইম্ফল উপত্যকায় মেইতেই গোষ্ঠীর আধিপত্য রয়েছে এবং এখানকার দুটি হাসপাতালে রাখা মরদেহগুলো কুকি নৃগোষ্ঠীর অন্তর্গত। চুড়াচাঁদপুরের জেলা মেডিকেল হাসপাতালে যে মরদেহগুলো রাখা হয়েছে সেগুলো কুকি এবং মেইতেই উভয় গোষ্ঠীরই। তবে তাদের মধ্যে কুকিদের মরদেহের সংখ্যাই বেশি।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দাঙ্গার পর কুকিরা মেইতেইর এলাকায় যেতে পারে না এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেরা কুকিদের এলাকায় যেতে পারে না। আইন অনুযায়ী, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে হাসপাতাল মর্গে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করতে হয় এবং পরিবারের সদস্যরা একে অন্য জাতির অঞ্চলে যেতে না পারায় কয়েক মাস ধরে এসব দেহ শনাক্তকরণ ছাড়াই এখানে রাখা হয়েছে।
অত্যন্ত সংবেদনশীল পরিস্থিতির কারণে হাসপাতালগুলো এখনো এসব মরদেহের ছবি এবং বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেনি। এই দুই জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও ঘৃণার ব্যবধান এতটাই গভীর হয়ে উঠেছে যে তা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর দুই গোষ্ঠীরই আস্থা কমে যাওয়ায় সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠছে।