মরমী কবি হাসন রাজার জন্মদিন আজ । ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ শহরের লক্ষণশ্রী তেঘরিয়া গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহন করেন হাসন রাজা । তাঁর পিতার নাম দেওয়ান আলী রাজা ।

সিলেটে আছে হাসন রাজা স্মৃতি সংগ্রহশালা। সেখান থেকে সংগৃহীত ছবি।
মাত্র ১৫ বছর বয়সেই জমিদারি শুরু করেন হাসন রাজা। যৌবনে তিনি ছিলেন ভোগ বিলাসে মত্ত । বর্ষাকাল এলেই নৌকা বজরা সাজিয়ে গানের দল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন । উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি ছিলেন বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক। তিনি ঘোড়া পুষতেন, তার প্রিয় দুটি ঘোড়ার নাম ছিল জং বাহাদুর এবং চান্দমুশকি। হাছন রাজার মোট ৭৭টি ঘোড়া ছিলো, মোটকথা সৌখিনতার পিছনেই সময় কাটতো হাসন রাজার ।
এমন বিলাসী জীবন কাটানোর মধ্যেই দিয়েই তাঁর আধ্যাত্মিক বোধের জন্ম নেয়।ছেড়ে দেন তাঁর জমিদারি। বিলাসী পোশাক ছেড়ে নেন সাধারণ পোশাক। অত্যাচারী জমিদার থেকে হয়ে ওঠেন এক বাউল সাধক।
ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় তাঁর বৈরাগ্যভাব। সম্পূর্ণ বদলে গেলেন জমিদার হাসন রাজা। অত্যাচারী থেকে হলেন ‘ নম্র হাসন ‘ তারপর থেকে কেবল মানব সেবা নয়, জীব সেবাতেও তিনি নিজেকে নিয়োজিত করলেন ।

সর্বমানবিক ধর্মীয় চেতনার এক লোকায়ত ঐক্যসূত্র রচনা করেছেন এই মরমী কবি। ছবি : সংগৃহীত
লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নায় আমার, সোনা বন্দে আমারে পাগোল করিলো, ও যৌবন ঘুমেরই স্বপন, আমি যাইমু যাইমু মাওলারও সঙ্গে…এমন অসংখ্য গান রেখে গেছেন তিনি। এছাড়া ‘হাছন উদাস’ গ্রন্থে তার ২০৬ টি গান সংকলিত হয়েছে। এর বাইরে আরও কিছু গান ‘হাছন রাজার তিনপুরুষ’ এবং ‘আল ইসলাহ্’ সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি সর্বমানবিক ধর্মীয় চেতনার এক লোকায়ত ঐক্যসূত্র রচনা করেছেন। হাসন রাজার গানগুলো শুনলে মনের মাঝে আধ্যাত্ম বোধের জন্ম হয়। একবোধ জন্ম নেয়। কবি জীবনানন্দ দাশ এই বোধের কথাই হয়তো বলতে চেয়েছেন এভাবে- ‘আলো অন্ধকারে যাই -মাথার ভিতরে / স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে! স্বপ্ন নয় শান্তি নয় ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!’
আবার হাসন রাজার দার্শনিকতার পরিচয় মেলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে। কবিগুরু প্রভাত কুমার শর্মার হাত ঘুরে হাসন রাজার গানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। সেই গানগুলোর মাধ্যমেই কবিগুরু হাসন রাজাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে উল্লেখ করেন, ‘পূর্ব বঙ্গের একটি গ্রাম্য কবির গানে দর্শনের একটি বড় তত্ত্ব পাই। সেটি এই যে, ব্যক্তিস্বরূপের সহিত সম্বন্ধ সূত্রেই বিশ্বসত্য। ১৯২৫ সালে দর্শন কংগ্রেসের সভায় ও পরবর্তীকালে লন্ডন হিবার্ট বক্তৃতায় কবিগুরু হাসন রাজা সম্পর্কে এই বক্তব্য প্রদান করেন।
হাসন রাজার চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায় তার গানে। অনুমান করা চলে, তার অনেক গান এখনো সিলেট-সুনামগঞ্জের লোকের মুখে মুখে আছে, কালের নিয়মে বেশ কিছু গান বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নেন হাসন রাজা ।