fbpx

‘মাণিক’ ডাকনামের কবীর চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

খান বাহাদুর আব্দুল হালিম চৌধুরী এবং উম্মে কবীর আফিয়া চৌধুরীর সন্তান অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। এই জাতীয় অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, লেখক, সংস্কৃতি ও সমাজকর্মীর আজ প্রয়াণ দিবস।

২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর আজকের এই দিনে কবীর চৌধুরী ঢাকার নয়াপল্টনে নিজের বাসায় ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন।

কবীর চৌধুরী ছিলেন দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। তাকে  ১৯৯৮ সালে জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদায় ভূষিত করা হয়।। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী নামে তিনি অধিক পরিচিত, তবে তাঁর ডাকনাম মাণিক। কবীর চৌধুরীর ছোট ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী।

‘মাণিক’ ডাকনামের কবীর চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস

অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ছবি: সংগৃহীত

কবীর চৌধুরীর জন্ম ১৯২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায়। পৈতৃক নিবাস ছিল নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার গোপাইরবাগ গ্রামে।

নিজ গৃহে পিতার তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় কবীর চৌধুরীর। এরপর ১৯৩৮ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৪০ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এই দুই পরীক্ষাতেই প্রথম বিভাগ ও বৃত্তি লাভ করেন তিনি। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ (সম্মান) ও এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। এখানেও তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভের পর কবীর চৌধুরী পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে অধ্যাপনায় নিয়োজিত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি ব্রহ্মদেশ থেকে আসা বাস্তুহারাদের তত্ত্বাবধানের কাজে ক্যাম্প অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে, ১৯৪৫ সালের জুন মাসে তিনি মেহের কবিরের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। মেহের কবীর ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক।

১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলায় সিভিল সাপ্লাই বিভাগে মহকুমা কন্ট্রোলার এবং পরে জেলা কন্ট্রোলার পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি শিক্ষকতা পেশায় ফিরে আসেন রাজশাহী সরকারি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে। পরে তিনি কিছুকাল ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করেন। এরপর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ ও ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে পর পর অধ্যক্ষ পদে কর্মরত ছিলেন। কিছুকাল তিনি শিক্ষা বিভাগীয় ও প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমীর ডিরেক্টর এবং পরে ডিরেক্টর জেনারেল পদে কর্মরত ছিলেন।

১৯৫৭-৫৮ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমেরিকান সাহিত্য বিষয়ে অধ্যয়ন করেন কবীর চৌধুরী। সরকারি বৃত্তি নিয়ে তিনি ১৯৬৫ সালে সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।

১১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কবীর চৌধুরী ন্যাশনাল এডুকেশন কাউন্সিলের প্রথম সদস্য-সচিব পদে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে তাঁকে শিক্ষা ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়। কিছুদিন শিক্ষাসচিব পদে দায়িত্ব পালনের পর তিনি ১৯৭৪ সালে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক পদে যোগদান করেন।

১৯৮৩ সালে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় তিনি নাট্যকলা বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি ইংরেজি বিভাগে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক এবং খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

তাঁর রচিত, সম্পাদিত ও অনুবাদ করা বইয়ের সংখ্যা দুই শ’রও বেশি। তিনি ইংরেজি ও বাংলা দু’ভাষাতেই বই লিখেছেন এবং অনুবাদও করেছেন। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, চেখভ, স্ট্রিনবার্গ, ইবসেন, স্যামুয়েল বেকেট, নগীব মাহফুজ, জেএম কোয়েতজি, বেওউলফ ও জোসে সারামাগোসহ অনেক বিখ্যাত লেখকদের শ্রেষ্ঠ রচনাবলির বাংলা অনুবাদ করেছেন তিনি। একদিকে বাঙালি পাঠকদের বিশ্ব সাহিত্যের সাথে পরিচিতি করে তোলা এবং অন্যদিকে, বাংলা সাহিত্যকে ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে বিদেশী পাঠকদের সামনে তুলে ধরা ছিল কবীর চৌধুরীর অনুবাদ কর্মের অনন্য সাধারণ সাফল্য।

একজন বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজকর্মী কবীর চৌধুরী অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে শিক্ষা, শান্তি ও আন্ত-সাংস্কৃতিক সমঝোতার উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি দেশে ও বিদেশে অনেক সম্মাননা লাভ করেছেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’ ও ‘একুশে পদক’ লাভ করেন তিনি। এছাড়া, তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাহিত্য পুরস্কার, শেরে বাংলা পুরস্কার, কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি প্রদত্ত ট্যাগোর পিস অ্যাওয়ার্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের উইলিয়ম ক্যারি রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডি সেন্টার প্রদত্ত উইলিয়ম ক্যারি গোল্ড মেডেলও লাভ করেন।

প্রয়াণ দিবসে তাঁর প্রতি রইলো অগাধ শ্রদ্ধা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply