fbpx

মৈত্রী পাইপলাইন বাংলাদেশ-ভারত পারস্পরিক সহযোগিতার মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন দুদেশের উন্নয়ন ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক অর্জন। এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তাবৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত করবে এবং আমরা যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি আমি চাই ভারতের বিনিয়োগকারীরাও এখানে এসে আরও বিনিয়োগ করুন। আমরা দুদেশই তাতে লাভবান হবো।’

ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিশোধিত ডিজেল আমদানি উদ্বোধন ঘোষণাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় উদ্বোধনীতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

দুদেশের প্রধানমন্ত্রী বাটন চেপে পর্দা উন্মোচন করেন।

মার্চ মাস বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, একাত্তরে শহীদ সব মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শহীদদের।

বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। ভাতৃপ্রতীম প্রতিবেশি রাষ্ট্র। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবাধ প্রবাহ, ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক সেতুবন্ধন আমাদের দুদেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর করেছে। আমরা কৃতজ্ঞ যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার এবং জনগণ অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। ১ কোটি বাঙালি শরণার্থীদের স্থান দেওয়া, তাদের খাবার-চিকিৎসার ব্যবস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেওয়া এসব আমরা ভারতের কাছ থেকে পেয়েছি। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীবাহিনীর অভিযানে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি।’

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের জনগণ, ভারতের সরকারের কাছে ঋণী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা জাতির পিতাকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয় আমরা দুই বোন, আমি, রেহানা তখন ভারতেই আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমাদের আরও আত্মীয় স্বজন যারা বেচে গিয়েছিল তারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনাকে আমরা বাস্তবে রূপদান করেছি। দুদেশের মধ্যে যেসব সমস্যা একে একে আমরা সমাধান করেছি। ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি চুক্তি করেছি। ভারতের সঙ্গে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে যেসব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল- রেল যোগাযোগ থেকে শুরু করে সড়ক যোগাযোগ সবই আমরা মুক্ত করেছি। ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারণ আমরা ঘটিয়েছি। আমরা উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি এবং ভারতের কাছ থেকে আমরা উন্নয়নে সহযোগিতা পাচ্ছি। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদার করা, উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছি।’

‘দুদেশের জনগণের কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে পারষ্পরিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশে আমরা শতভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইতোমধ্যেই তা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা বর্তমানে ভারতের থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। বিদ্যুৎখাতে উপআঞ্চলিক পর্যায়সহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আরও কয়েকটি উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। কাজেই সহযোগিতার ফলে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে। আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ে যে সমস্যা ছিল সেটাও আমরা সমাধান করতে পেরেছি। সেজন্য ভারতের নেতৃবৃন্দ ও সরকারকে আমার ধন্যবাদ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আমি ভার্চুয়ালি এই পাইপলাইনের কাজ উদ্বোধন করি। আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিজীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই যে এই পাইপলাইনের কাজ উদ্বোধনের ফলে আজকে তা সম্পন্ন হলো। ভারতের শিলিগুড়িতে অবস্থিত নোমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড হতে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩১.৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতই তা নির্মাণ করে দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশে পড়েছে ২৬.৫৭ কিমি এবং ভারতের অংশে ৫ কিমি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে এই পাইপলাইনটি আজ থেকে কার্যকর হয়ে গেল। আমি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত উভয় দেশের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই ভারতের যারা দিনরাত পরিশ্রম করে এই পাইপলাইন নির্মাণ করে দিয়েছেন। ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন চালুর ফলে বাংলাদেশের জনগন নানাভাবে উপকৃত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি তখন এই পাইপলাইনটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।’

‘এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় ও সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। আমরা আশা করি এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে। পাইপলাইন নির্মাণে প্রযুক্তিগত আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য আমি ভারত সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

‘আমি আসামের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীসহ, আসামের জনগণকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি তারা পাইপলাইন নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন। বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত হতে বছরে ৬০ হতে ৮০ হাজার মেট্রিকটন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হতো।’

‘পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে। আসামের থেকে একটা ভালো বাজার বাংলাদেশ সৃষ্টি হলো। যেখানে এই ডিজেলগুলো বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়নের কাজে লাগবে। সেখানে আসামবাসীও লাভবান হবে, ভারতবাসীও লাভবান হবে। পার্বতীপুরে বর্তমানে আমাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে আমরা আরও ২৮ হাজার ৮০০ মেট্রিক টনে উন্নীত করবার কাজ করে যাচ্ছি।’

‘মংলা-চট্টগ্রাম বন্দর, সিলেট-চট্টগ্রাম-সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি’

দুদেশের বন্ধুত্ব অটুট রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই। দুদেশের কল্যাণে আমরা একসাথে কাজ করে যাবো। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাই আমাদের দেশের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক সেইসাথে আমাদের মংলা বন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আমরা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। আমাদের এই বন্দর ভারতের ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা হবে না। যার ফলে ব্যবসা বাণিজ্য সহজ হবে, দুদেশের মানুষই লাভবান হবে।’

‘ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন দুদেশের উন্নয়ন ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক অর্জন। এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তাবৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত করবে এবং আমরা যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি আমি চাই ভারতের বিনিয়োগকারীরাও এখানে এসে আরও বিনিয়োগ করুন। আমরা দুদেশই তাতে লাভবান হবো।’

ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মতো আগামী দিনে আরও অনেক সফলতা বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে উদযাপন করবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দুদেশ একইসাথে কাজ করবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement
Share.

Leave A Reply