রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালির মনে-প্রাণে মিশে থাকা এ নাম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি আর মানবিক মূল্যবোধের দিশারী।
কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাস- বাংলা সাহিত্যের সব কটি ধারাই তাঁর লেখনিতে হয়েছে সমৃদ্ধ। তিনি লিখেছেন সর্বকালের কথা। দূরদর্শী কবি নিজেই বোধহয় জানতেন, তাঁর লেখনী, ভাবাদর্শ, অমৃত অক্ষয় হয়ে বয়ে যাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মে। ওই সময়ে বসেই তিনি লিখেছেন আজকের কথা–
‘আজি হতে শত বর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতা খানি
কৌতুহলভরে…’
১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কালজয়ী এ কবি। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মা সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের ১৪ তম সন্তান। আজ কবির ১৬১তম জন্মবার্ষিকী।
সহজ সরল ভাষা, আর নিবিড় পর্যবেক্ষণে তিনি লিখেছেন মানুষের মনের সবচেয়ে কাছের কথা। সে লেখায় বারবার চমকে যায় পাঠক- মনে হয় এতো তারই কথা! বাঙালির অন্তরে জ্বলজ্বল করা নক্ষত্র রবি- অথচ নিজের অন্তরজুড়েই ছিল পাহাড়সম কষ্ট। পারিবারিক টানাপোড়েন, হারানোর সুর আর দুঃখের দহনে পুড়ে নিজেকে করেছেন হীরার চেয়েও দামি।
ব্যক্তি রবি সবার মধ্যে থেকেও ছিলেন খুবই একা। আর তাই হয়তো তাঁর কলমে উঠে এসেছিল, ‘ প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ কিন্তু বেদনা থাকে সারাটি জীবন’-এর মতো লেখা। কোথাও তাঁকে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করত অজানা বেদনা। তা কবি বুঝতে পারতেন মন থেকে। তাই অমলের একাকিত্ব আজও আমাদের কাঁদায়।
জীবনের জয়গান গাওয়া রবি ভয় পেতেন মৃত্যুকে। অকালপ্রয়াণকে। তিনি লিখেছেন “শান্তিপূর্ণ মৃত্যুকে বিন্দুমাত্র ভয় করিনি। ভয় করি অপঘাত মৃত্যুকে।”
এই মানুষটিরই চোখের সামনে হারাতে দেখেছেন প্রিয় সন্তান, স্ত্রীসহ অনেক অন্তরজনকে।
রবি ঠাকুরের জীবন তাই মোটেই ছিল না বিলাসবহুল। প্রতি মুহূর্তে তাঁর মনে দানা বাঁধত বেদনা, যন্ত্রণা আর বিরহ। পোড় খাওয়া জীবনের আনাচে-কানাচে তবু বেজে উঠতো আনন্দ, ভালবাসা আর মানবিকতার কথা। সেই অনুভূতি নিগড়েই তিনি হয়েছেন বিশ্বকবি।
১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নন্দিত জীবনের উৎসারিত আলো ছড়িয়ে বিশ্বকবির কর্মময় জীবনের অবসান হয় ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ।