fbpx

‘রমা’ ডাকনামের সুচিত্রা সেনের প্রয়াণ দিবস

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

নায়িকা, তারকা, গুণী অভিনেত্রী অনেক দেখেছে বাংলা চলচ্চিত্র। কিন্তু দেখা হয় নাই ‘ড্রিম গার্ল’। সুচিত্রা সেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে আছেন বাঙালির ‘ড্রিম গার্ল’ হয়ে। তার ঠোঁট কাপানো, ভ্রুযুগলের ওঠানামা, নজরকাড়া অভিব্যক্তিতে মোহিত আজও বাংলা সিনেমার দর্শক। ১৭ জানুয়ারি আমাদের পাবনায় জন্ম নেওয়া ‘রমা’ ডাকনামের এই মহানায়িকার প্রয়াণ দিবস। ২০১৪ সালের এই দিনে পরলোকে পাড়ি জমান তিনি।

‘রমা’ ডাকনামের সুচিত্রা সেনের প্রয়াণ দিবস

এই অভিনেত্রী হৃদয় কেড়েছেন লাখো তরুণের। ছবি: পিটিআই

সুচিত্রা সেনের কথা মনে হতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঘাড় বাঁকানো সেই রোম্যান্টিক ভঙ্গি! ৬০, ৭০ এর দশকের পর্দা কাপানো এই অভিনেত্রী হৃদয় কেড়েছেন লাখো তরুণের। শুধু তরুণ বললে ভুল হবে, যেকোনো বয়সী নারী-পুরুষের প্রিয় নায়িকা ছিলেন তিনি। এখনো তাই আছেন। অতুলনীয় সৌন্দর্যের সাথে অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা, সেই সাথে তার চমৎকার ব্যক্তিত্ব-সবকিছু মিলিয়ে তিনি আজও দর্শকের মনের মণিকোঠায় চিরস্মরণীয়।

‘রমা’ ডাকনামের সুচিত্রা সেনের প্রয়াণ দিবস

সেই হাসির মেয়ে। ছবি : পিটিআই

সুচিত্রা সেনই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম অভিনেত্রী, যিনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন “সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস” জয় করেন। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ পদক প্রদান করে। শোনা যায়, ২০০৫ সালে তাকে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। কিন্তু সুচিত্রা সেন জনসমক্ষে আসতে চান না বলে এই পুরস্কার গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘বঙ্গবিভূষণ’ প্রদান করা হয়।

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গের পাবনায় ‘রমা সেনগুপ্ত’ নামে যে মেয়েটি জন্ম নেয় তিনি সুচিত্রা সেন হয়ে ভুবন মাতিয়েছে। তার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন এক স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। রমা ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। পাবনা শহরেই তিনি পড়াশোনা করেন। বরেণ্য কবি রজনীকান্ত সেন ছিলেন তার নানা।

১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। তাদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী। ১৯৫২ সালে সুচিত্রা সেন নামে তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত হন। মূলত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। এই জুটিকে কখনোই ভুলবে না বাঙালি। উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর তিনি আর কারো বিপরীতে অভিনয় করেননি।

‘রমা’ ডাকনামের সুচিত্রা সেনের প্রয়াণ দিবস

সুচিত্রা-উত্তম জুটি। ছবিসূত্র : ইউটিউব

সুচিত্রা সেন অভিনীত অসংখ্য সিনেমার ভেতর উল্লেখযোগ্য ‘মরণের পরে’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘গৃহপ্রবেশ’, ‘সাঁঝের বাতি’, ‘দেবদাস’, ‘সাজঘর’, ‘মেজ বৌ’, ‘সাগরিকা’, ‘শিল্পী’, ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরী’, ‘রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত’, ‘দ্বীপ জ্বেলে যাই’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘গৃহদাহ’।

১৯৭৮ সালে সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন। এরপর তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন। তাকে নিয়ে তুমুল কৌতুহল চলে। কিন্তু তিনি থেকে যান আড়ালেই। তিনি চাইতেন তার নায়িকা ইমেজই মানুষের মনে থাকুক। বার্ধ্যকের সুচিত্রাকে কেউ দেখেনি তাই। শত শত আলোকচিত্রীর ভিড় সারাক্ষণ লেগে থাকতো তার বাড়ির সামনে।

২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮২ বছর বয়সে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়। তার শেষকৃত্যে গান স্যালুট দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে সুচিত্রা যুগের শেষ হয় না। সুচিত্রা সেন চিরঞ্জীব। বাঙালি হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন অবিরাম।

প্রয়াণ দিবসে অজর শ্রদ্ধা তার প্রতি।

 

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া

Advertisement
Share.

Leave A Reply