fbpx

রাজনীতি করবে না মুচলেকা দিয়ে তারেক জিয়া বিদেশ গেছে: প্রধানমন্ত্রী

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ‘আর রাজনীতি করবে না’ মুচলেকা দিয়ে তারেক জিয়া বিদেশে গেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির এক নেতা বলেছেন তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয় না। সে তো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে। ২০০৭ সালে তারেক জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল, একেবারে লিখিত দলিল যে সে আর রাজনীতি করবে না। এই শর্তে সে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এটা তো বিএনপির নেতাদের ভুলে যাওয়ার কথা না। তাকে তো কেউ বিতাড়িত করেনি।’

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তার জন্মলগ্ন থেকেই এই ভূখণ্ডের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই সংগ্রাম করেছে এবং সাফল্য এনেছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস, একই ইতিহাস। কারণ ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সংগ্রাম শুরু হয়। তখন মাওলানা ভাসানী সভাপতি, সামসুল হক সাহেব সাধারণ সম্পাদক এবং কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে এই সংগঠন গড়ে তোলা হয়। এই সংগঠন গড়ার শুরু থেকেই এ দেশের মানুষের অধিকার নিয়েই সংগ্রাম শুরু।’

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সংগ্রামের পেছনেও কিন্তু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠন করেই ৫২’র ভাষা আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, সেই ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ঘোষণা করে। যেখানে এই গুলি চলেছে সেখানে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে, অর্থ বরাদ্দ দেয় বাজেটে এবং নির্মাণ কাজও শুরু করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশে গণতন্ত্র কিংবা গণতন্ত্রের ধারা কখনো অব্যাহত থাকতে পারেনি। ৫৮ সালে ৭ অক্টোবর আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারি করে। ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে যায়। মার্শাল ল’ জারি করার সময় আইয়ুব খান ছিল সেনাপ্রধান, নিজেকে রাষ্ট্রপতিও ঘোষণা করেন। একাধারে সেনাপ্রধান, তারপর আবার রাষ্ট্রপতি। সমস্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ, আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সবই নিষিদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘১৯৫৭ সালে কাগমারি কনফারেন্স হয়। সেটা ভালোভাবে হয়ে গেলেও সেখানে কিছু বিষয় নিয়ে মাওলানা ভাসানী প্রশ্ন তোলেন এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন দল গঠন করেন—ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি। যে মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ভাঙলো তার পরপরই কিন্তু মার্শাল ল’ জারি হলো।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘৬৪ সালে আইয়ুব খান রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, কারণ তখন তিনি নিজেই একখানা দল তৈরি করে। সেই দল তৈরি করে বেসিক ডেমোক্রেসি নাম দিয়ে গণতন্ত্রে একটা ধোঁকাবাজি শুরু করে। সেই সময় আবার আওয়ামী লীগ রিভাইব করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৬ দফা দেওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগের একটি কনফারেন্স হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সভাপতি এবং তাজউদ্দীন আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। তার পরপরই তিনি (বঙ্গবন্ধু) গ্রেপ্তার হয়ে যান। কিন্তু আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করা, একটা সংগঠনকে গড়ে তোলা, সেখানে একটি সংগঠনের আদর্শ নিয়ে সুসংগঠিত করা—এটাই তিনি সবসময় করে এসেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আইয়ুবের পতনের পর ইয়াহিয়া খান—আরেক মিলিটারি ডিকটেটর ক্ষমতায় আসে। সে নির্বাচন দিয়েছিল কতগুলো শর্ত সাপেক্ষে। সেই শর্ত মেনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নির্বাচনে যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘সে সময় আমাদের এ দেশের অনেক রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ কিন্তু কখনো কোনো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়নি। নির্বাচনে সব সময় অংশগ্রহণ করেছে এবং সেখানে সাফল্যও এসেছে।’

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশের কিছু দালাল সব সময়ই ছিল। একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মনে হয় যেন তাদের কোনো দিনই কোনো শান্তিই ছিল না। এই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়। কাজেই চক্রান্তটা শুরু থেকেই চলতে থাকে।’

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মুশতাক সরকার গঠন করে বেআইনিভাবে, সংবিধানের বিরুদ্ধে, জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়। ৭৫ এর পর থেকে ১৯টার উপরে ক্যু হয় বাংলাদেশে। যেখানে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ দেশ, এ দেশের মানুষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘মার্শাল ল’ দিয়ে শকুনের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত করা হয় আমাদের সংবিধানকে। যেহেতু সংবিধানকে লঙ্ঘন করে, আর্মি রুলস লঙ্ঘন করে জিয়া ক্ষমতা দখল করেছিল, কাজেই সেই সংবিধানকেই মার্শাল অর্ডিন্যান্স দিয়ে বারবার পরিবর্তন করা হয় এবং পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেটাকে জায়েজ করার চেষ্টা করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের নামে যে প্রহসন সেটা জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই শুরু। তার হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন—সেনাপ্রধান হিসেবে থেকে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে আবার নির্বাচনে সে প্রার্থী হয়। এটা সংবিধান মোতাবেকও পারে না, আর্মি রুলস অ্যাক্ট মোতাবেকও পারে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন মার্শাল ল’ জারি করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে, যে প্রার্থী হলো, দল গঠন করা শুরু করলো—তাকেই বানানো হলো গণতন্ত্রের প্রবক্তা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুষ্টিমেয় চাটুকারের দল, তোষামোদি-খোসামোদির দল অবৈধভাবে ক্ষমতায় যারা এসেছে তাদের পদলেহন করলেও সাধারণ বাঙালি তা করেনি। বাংলাদেশের মানুষ সব সময় ঠিক ছিল।’

‘৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০ দলীয় জোট করা হয়েছিল। মাঝে মাঝে মনে হয়, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট হলো। পাকিস্তান আমলেও হয়েছিল ৭০ এর নির্বাচনে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুনলাম, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া স্লোগান দেয়—পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি। এর মধ্যে দিয়ে এটাই প্রমাণ করেছে, তার বাপ যে পাকিস্তানের দালাল ছিল, তার মা-ও যে পাকিস্তানি দালাল হিসেবেই ছিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, আদর্শগুলো একে একে মুছে ফেলেছিল, ইতিহাস মুছে ফেলেছিল, জাতীয় পিতার নামটা মুছে ফেলেছিল। এটা তো খুব স্বাভাবিক যে এই স্লোগান দেবে। পাকিস্তানি সেনাদের পদলেহন করে চলাটাইতো তাদের অভ্যাস। তারা তো স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীন জাতি হিসেবে যে একটা মর্যাদা আছে এটাই তাদের পছন্দ না। তারা পরাধীন থাকতেই পছন্দ করে। কারণ পাকিস্তানিদের লাথি-ঝাঁটাটাও তাদের কাছে ভালো লাগতো মনে হয়। এটাই বাস্তবতা। এটাই মনে করতে হবে এবং এটা মনে করেই তাদের করুণা করতে হবে। কিন্তু এরা চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী। সেটাও মনে রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গুম-খুন এটাতো জিয়াউর রহমানই শুরু করে দিয়েছিল সেই পঁচাত্তর সালের পর যখন সে রাষ্ট্রপতি হয়। খালেদা জিয়া এসেও তো আমাদের কত নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। এরশাদের আমলেও তো আমাদের নেতা-কর্মী নির্যাতিত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে বলে, কালকে আমি বলেছিলাম, কারা অংশগ্রহণ করবে। কে করবে অংশগ্রহণ? অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে যে দল সৃষ্টি হয়, দুর্নীতি-খুন-হত্যা-অস্ত্র চোরাচালানের দায়ে যে দলের নেতারা সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং তারা তো পলাতক।’

Advertisement
Share.

Leave A Reply