fbpx

লকডাউনে গরিবের ভরসা মেহমানখানা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

এই লকডাউনেও থেমে নেই মেহমানখানার কাজ। অসহায়, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের মুখে তিনবেলা না হোক অন্তত একবেলা রান্না করা খাবার তুলে দিতেই সকাল থেকেই শুরু হয় দিনের আয়োজন।

নিজ নিজ কর্মস্থল শেষে অথবা লকডাউনে ঘরে বসে না থেকে মেহমানখানার কাজ করতে দুপুরের পর থেকেই লালমাটিয়া ডি ব্লকে জড়ো হতে থাকেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

কাঁটাবাছা থেকে শুরু করে সব কাজেই তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। কেউ করছেন সাফ সাফাই, কেউ কসাইয়ের দায়িত্বে, কেউ আবার হয়েছেন বাবুর্চি। শেষে বিকেলে আসবে মেহমান। তার আগেই শেষ করতে হবে রান্নার কাজ। মেহমানদের খাতির যত্নে এতোটুকু ত্রুটি যেনো না হয়, সেই লক্ষ্যে সবার অক্লান্ত পরিশ্রম। এক বেলা খাবারের আয়োজনে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে সার্থক মনে করছেন সারাদিনের পরিশ্রম।

মেহমানদের আপ্যায়ন শুরু বিকেল পাঁচটা থেকে। লালমাটিয়া ডি ব্লকের রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান রিক্সাচালকেরা। লাইনে দাঁড়ানো সবার প্লেটে পরম মমতায় খাবার তুলে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

লকডাউনে একেবারেই আয় নেই রিক্সাচালক, খেটেখাওয়া দিনমজুর বা নিম্নআয়ের মানুষের। পথশিশু অথবা ছিন্নমূল মানুষের খোঁজ আর কেউ নাইবা নিল। কিন্তু মেহমানখানা খোঁজ রাখে। প্রতিদিনি চার হাড়িতে রান্না চাপে প্রায় তিন হাজার মানুষের খাবার।

লকডাউনে অসহায় মানুষের মুখে একবেলা খাবার তুলে দিতে পারাটাই যেনো বিশাল আনন্দের, এমনটাই জানালেন মেহমানখানার উদ্যোক্তা আসমা আক্তার লিজা।

বিবিএস বাংলাকে তিনি বলেন, ‘লকডাউনে অনেক মানুষ কাজ হরিয়েছে। ছিন্নমূল মানুষেরও আয় রোজগার নেই। কোথায় যাবে ওরা? কি খাবে? আমিতো ওদের কথা ভেবে খেতে পারি না। আমার দমববন্ধ হয়ে আসে। যেটুকুই পারি আয়োজন করি। আগের চেয়ে সাহায্যের পরিমাণ বেড়েছে বলেই প্রতিদিন আমরা আয়োজন করতে পারছি। তিনবেলা না হোক, একবেলা অন্তত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি। তাই আমাদের কাছে অনেক।’

আয়োজন সীমিত, তবু ফুটপাতে বসেই তৃপ্তির সাথে খেয়ে নিচ্ছেন খিচুড়ি আর এক টুকরা মাংস। অনেক দামী পোলাও কোরমাতেও হয়তো নেই এতো সুখ। এই অভাবের দিনে এমন আয়োজন সত্যিই মানবতার অনন্য উদাহরণ।

রিক্সাচালকেরা জানালেন, লকডাউনে আয়রোজগার খুব কম। সারাদিনে মাত্র দেড়শো টাকা ইনকাম হয়েছে। নিজে খাবে নাকি পরিবারের জন্য খাবার কিনে নিবে। এই মেহমানখানা থেকে খেয়ে গেলে অন্তত একশো টাকা বাঁচে।

পথশিশুরা জানালেন, তৃপ্তি নিয়ে খাবার খেতে প্রতিদিন মেহমানখানায় আসেন তারা। লকডাউন শুরু হবার পর থেকে ফুল বিক্রি, চকলেট বিক্রি করা বা রেল স্টেশনে কুলির কাজ, সবই বন্ধ। এমন সময়ে এই এক বেলা খাবার তাদের অনেক উপকারে আসে।

সমাজের অবহেলিত, গরিব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে অর্থের চেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বদিচ্ছা বা মানবতার। এই মেহমানখানার মতো আরও অনেক মেহমানখানা গড়ে উঠুক এবং মানবতার জয় হোক, এমনটাই স্বপ্ন মেহমানখানার কর্মীদের।

Advertisement
Share.

Leave A Reply