fbpx

লক্ষণ বুঝতে নিয়মিত পরীক্ষা, নির্মুল হবে স্তন ক্যানসার

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

মোহাম্মদপুরের রোকেয়া রুমি, পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। ২০১০ সালে স্তনে ছোট চাকার মতো বুঝতে পেরে ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার স্তন পরীক্ষা করেই বায়োপসি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। পরীক্ষার পরেই ধরা পড়ে তার স্তনের চাকা টিউমারটিতে আছে ক্যান্সারের জীবাণু।

বিবিএস বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে, আমি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়িনি।  মনে সাহস রেখে পরবর্তী চিকিৎসাগুলো নেই। ২১ দিন পরপর আমি ৬টি কেমোথেরাপি নেই। থেরাপি শেষ হবার পর আমি অপারেশন করাই। অপারেশনের কিছুদিন পর যখন আমার স্তনের ঘা প্রায় শুকিয়ে আসে তখন ডাক্তার আমাকে রেডিওথেরাপি নিতে বলে। ২ থেকে ৩দিন পরপর আমি ২৬টি রেডিওথেরাপি সম্পন্ন করি।’

চিকিৎসার পুরো সময়টিতে অসম্ভব যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে জানিয়ে রোকেয়া রুমি বলেন, ‘কেমোথেরাপি নেওয়ার সময়টা আমি খুব কষ্টে পার করেছি। আমার চুল পড়ে গিয়েছিল, পা ফুলে গিয়েছিল, মুখে ঘা হয়ে গিয়েছিল। আমি কিছু খেতে পারতাম না। আর রেডিওথেরাপি নেবার সময়ও আমার অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। অনেকদিন গোসল করতে পারিনি। এমনকি ঈদের দিনেও গোসল করতে পারিনি। আর শারীরিক যন্ত্রণার কথা কি বলবো.. রেডিওথেরাপির পর প্রায় ৫ বছর আমি নিয়মিত চেকআপে ছিলাম। এখন বছরে দুই থেকে তিনবার চেকাপ করি, কিন্তু আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।

লক্ষণ বোঝার সাথে সাথেই চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পেরেছেন বলেই স্তন ক্যান্সার থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে পেরেছেন শিক্ষিকা রোকেয়া রুমি। ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘদিন লড়াই করতে যেয়ে দেখেছেন দরিদ্র নারীদের অসহায়ত্ব। তাই নিজের সামর্থ অনুযায়ী তাদেরকে সাহায্য করতে গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইএইচআরডি ক্যান্সার সাপোর্ট সেন্টার।

বিশ্বে প্রতি আটজনের মধ্যে একজন নারী, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। যার মধ্যে মারা যাচ্ছেন ৬ হাজার ৭৮৩ জন নারী। এ তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসি’র গবেষণায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, ২০ বছর পর যেকোন নারীই স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যান্সার পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। তবে তার জন্যে নিয়মিত পরীক্ষা করার পরামর্শ তাদের।

ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ ও বারডেম জেনারেল হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম বিবিএস বাংলাকে বলেন, ‘নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। যেখানে ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে শুধু নারীর সংখ্যা ১৯ শতাংশ। সেখানে নারী পুরুষ মিলিয়ে সেটি ৮.৩ শাতাংশ। বাংলাদেশে নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ভুগতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারীকে।’

ডা. ফেরদৌসী বলেন, ‘স্তন ক্যান্সার থেকে সতর্ক থাকতে নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। প্রতি মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে স্তন পরীক্ষা করতে হবে। বসে নয় শুয়ে হাতের তালু দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্তন পরীক্ষা করতে হবে। স্তনের ভেতরে সুপারির মতো চাকা চাকা কিছু লাগে কিনা দেখতে হবে। স্তনের বোটা থেকে রস বা রক্ত জাতীয় কিছু বের হয় কিনা, লাল হয়ে যাওয়া বা স্তনের আকারে পরিবর্তন হয় কিনা খেয়াল রাখতে হবে। এর যেকোন একটি লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।’

স্তন ক্যান্সার হবার কারন সম্পর্কে চিকিৎসকরা জনিয়েছেন-

১. পরিবারের মায়ের দিকের নিকটাত্মীয়ের স্তন ক্যান্সার থাকলে

২. ১২ বছর আগে পিরিয়ড শুরু হলে

৩. ৫৫ বছরের পর অর্থাৎ দেরিতে মেনোপজ শুরু হলে

৪. বেশি বয়সে সন্তান ধারণ

৫. সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ালে

৬. জিনগন মিউটেশনের কারণে

৭. অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহণ

৮. অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া

৯. নিয়মিত ব্যায়াম না করা

১০. ধুমপান বা মদ্যপানের কারণেও হতে পারে স্তন ক্যান্সার।

স্তনে টিউমার বা সমস্যা হওয়া মানেই ক্যান্সার নয়। চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে ক্যান্সার হয়েছে কি না? ক্যান্সার হলেও এর আছে স্থায়ী চিকিৎসা। কেমোথেরাপি, সার্জারি এবং সার্জারির পরে রেডিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করলে স্তন ক্যান্সার পুরোপুরি নির্মুল করা সম্ভব বলেও জানালেন ডা. ফেরদৌসী।

ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার পরেও থেকে যায় নানারকম মানসিক সংকট। তাই শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি নারীদের মানসিক সুস্থতার প্রতি পরিবারকে আরও গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply