সাদিউস সুমন ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম কথা হয় সম্ভবত ২০০৫ সালে। তখন সমকালে কন্ট্রিবিউটর। এরপর যায়যায়দিনে থাকতে একটা ইন্টারভিউও করেছিলাম তাঁর। শফিক রেহমান সম্পাদিত যায়যায়দিনের আলোচিত ‘চে ক্যাফে’তে বসে। এরপর সাংবাদিকতার ট্র্যাক চেঞ্জ করার ফলে আর সেভাবে যোগাযোগ থাকেনি।
প্রথম তাঁর গানের সাথে পরিচয় আমার বড় ভাইয়ের সুবাদে। তাঁর কেনা সুমন ও অর্থহীন- অ্যালবাম দিয়ে। অবশ্য পরে জেনেছি ওয়ারফেজেও তাঁর গান আমি শুনে ফেলেছি অজ্ঞাতসারে। তখন তাঁকে না চেনায়।
এরপর ভালোভাবে দেখা, কথা বলা আড্ডা ২০১০ সাল নাগাদ। উপলক্ষ্য স্কুলের রিইউনিয়ন। আজব এক স্কুলে আমার পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা। স্মৃতি কাতরতায় ভুগি এখনও। স্কুলের নাম গভ: ল্যাবরেটরি হাই স্কুল। স্কুল ছেড়েও ছাড়া হয় না আমাদের। ‘ওলসা’ নামের এক ক্লাব আছে আমাদের। মাসে দু’মাসে সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে দেখা হয়েই যায় কাজে, অকাজে। আর সে বার তো রিইউনিয়নের মত বড় ব্যাপার।
সারাদিনের বিভিন্ন আড্ডাবাজি সিনিয়র-জুনিয়র-স্যারদের সঙ্গে আড্ডাবাজির পর ছিল কনসার্ট। মেকানিক্স, শিরোনামহীন, ওয়ারফেজ আর অর্থহীনের জমজমাট কনসার্ট। বলা ভালো, প্রতিটি ব্যান্ডেই এক বা একাধিক সদস্য আমাদের স্কুল থেকে পাশ করা। সেই কনসার্টের বিশেষ আকর্ষণ ছিল সাদিউস সুমন ভাইয়ের গাওয়া থিম সং। ৪৯ বছর পূর্তির সেই রিইউনিয়নে সেই গান শুনে, অর্থহীনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে আমরা সবাই কেঁদেছি। এমন আবেগেই ভেসেছিলাম সে সন্ধ্যায়।
এই অনুষ্ঠানের সময়েই যখন তিনি জেনেছেন আমার ফটোগ্রাফির প্রতি প্যাশনের কথা, এরপর অনেকবারই গভীর রাতে চ্যাটে ফটোগ্রাফি নিয়ে কথা হয়েছে। উনার আবার স্টার ট্রেইলের ছবির ব্যাপারে প্রচুর আগ্রহ। এরপর থেকে তাঁর অসুস্থতা নিয়ে শুনেছি। সবার মতোই চেয়েছি আবার ফিরে আসুক তিনি গানের জগতে। জন ডেনভারের বঙ্গানুবাদে বা অদ্ভুত ছেলেটির মতো।
আমাদের স্কুল পালিয়ে ঢাকা কলেজের আড্ডায়, বা স্কুলের ডিবেটিং ক্লাব ঘরের আড্ডায় তার গানই তো ছিল আমাদের সময় কাটানোর অন্যতম অনুষঙ্গ।
ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটে তাঁর যেকোনও সাফল্যে আমরা যেমন গর্ব অনুভব করি, তেমনই তাঁর অসুস্থতায় বিষন্নতা ধরে বসে আমাদের। আমরা তো ল্যাবরেটরিয়ান্স। তিনি স্কুলের স্টেজে উঠে অনেক কথা বলেন। তাঁকেও আবেগে ধরায় এই ইশকুল। বলে যান একে একে, ১৯৮৯ সালে স্কুলে টিচার্স রুমের সামনে ছুটির দিনে মেটাল কনসার্ট করে স্যারদের বকুনি-মাখা প্রশ্রয়ের গল্প। এরপর ২১ বছর পর সেই স্কুলের মাঠেই আবার বিজয়ীর বেশে স্যারদের সামনেই তিনি গান গেয়ে যান। সেই গানে আবার স্কুলের ৬২ সালের প্রথম ব্যাচ থেকে ২০০৯ সালের সব ছাত্র, নতুন-পুরনো সব ছাত্র, শিক্ষক স্মৃতি কাতরতায় চোখের জল ফেলে, এর থেকে বড় পাওয়া একজন শিল্পীর আর কি আছে! আমার কাছে সম্ভবত সমস্ত ল্যাবরেটরিয়ানের কাছেই তাঁর গাওয়া সেরা গান স্কুলের রিইউনিয়ন উপলক্ষে সেই গান।
আমি গর্বিত বেজবাবার যুগে বেঁচে থেকে। তাঁর স্কুলে পড়ে। তাঁর গান শুনতে পেয়ে।
আজ তাঁর জন্মদিন। এমন দিনে তাঁর কাছে আরও গান চাই। তিনি ভরিয়ে দিক আমাদের মন এক গহীন অরণ্যে। শোনাতে থাকুন, অচেনা সুরে বাজানো অদ্ভুত ছেলের হারমোনিকা। চাইতেই পারি আমি আবার সেই গান আরও একশ বছর দীর্ঘায়ু। তিনি যতোই বলুন আমাদের জন্য নয় তাঁর কোনও কিছুই। দরকার নেই এর। কেবল আপনার গানগুলোই শুনে যেতে চাই আরও একশ বছর, এক সহস্র বছর।
শুভ জন্মদিন বেজবাবা! আমাদের সুমন ভাই।
লেখা : আল মারুফ রাসেল