বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া কিংবা স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ, অথবা অনুন্নত একটি দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে আনা, এমনকি নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে মানবিকভাবে দাঁড়িয়ে বিশ্বের প্রশংসা লাভ, সব অর্জনই এসেছে একজন মানুষের নেতৃত্ব থেকে। আর তিনি হলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘসময়ের সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, তাঁর জন্মদিন। ৭৫ বছরে পা রেখেছেন তিনি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। ডাকনাম হাসু। বঙ্গবন্ধু আদর করে এই নামেই তাঁকে ডাকতেন। দাদা-দাদির কোলে-পিঠে চড়ে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াতেই কেটেছে তাঁর শৈশব আর কৈশোর। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই।
শৈশব থেকেই বেড়ে উঠেছেন রাজনৈতিক পরিমন্ডলে। বাবা শেখ মুজিবকে দেশের মুক্তির জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করতে দেখেছেন, দেখেছেন মুক্তিকামী শোষিত বাঙালীকে স্বাধীনতা এনে দিতে। এক জীবনে এতোটা উত্থান-পতন খুব কম মানুষই দেখেছেন। ১৯৭৫ এর আগের নির্ঝঞ্ঝাট জীবন হঠাৎ বদলে গেল এক রাতেই!
১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ইউরোপ থেকে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। কিন্তু, পরিবারহারা বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য তখন দেশের মাটিও এক অনিরাপদ জায়গা। সেই বাস্তবতা আর শোক তখন পরিণত হয় শক্তিতে।
শত বাধা পেরিয়ে ১৯৮১ সালে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশে ফিরে এলেন নতুন রুপে শেখ হাসিনা। স্বৈরশাসনের শৃঙ্খল ভেঙে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় শুরু হয় তাঁর সংগ্রাম। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের হাল ধরলেন তিনি।
১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মোট কথা দেশ আবারও তাঁর হাত ধরেই সঠিকপথে হাঁটা শুরু করে।
সহজ ছিল না সংগ্রাম ও সাফল্যের এই পথ। বারবারই হত্যার চেষ্টা করা হয় নেত্রীকে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১/১১ তে গ্রেপ্তার কিংবা মাইনাস-২ ফর্মুলার মতো কতো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে সরকারপ্রধানকে। কিন্তু, পিতা শেখ মুজিবের মতোই শত প্রতিকূলতাও থামাতে পারেনি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে।
২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার পরপর ৩ মেয়াদে বাংলাদেশের অর্জন চোখে পড়ার মতো। একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের পাশাপাশি একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করলেন তিনি।
দিনবদলের পথে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য যাত্রা শুরু হলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি, এখন অর্থনীতির এক উদীয়মান নতুন শক্তি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিণত হয়েছে। দেশের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তে বিশ্ব পরিমন্ডলে তিনি বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিশ্বের কাছে তিনি এখন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ নামে পরিচিত। পাশাপাশি, করোনা যুদ্ধে তিনিই হলেন বাংলাদেশের ‘কমান্ডার ইন চিফ’। করোনা মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশের হাল তিনিই ধরেছেন শক্ত হাতে।
সামাজিক বা অর্থনৈতিক, সবক্ষেত্রেই সফল রাষ্ট্রনায়ক তিনি। পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ‘ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়তে এখন দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুভ জন্মদিন শেখ হাসিনা।