fbpx

সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কিছু উপায়

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

পুরো পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বেড়েছে ঘরে থাকার সময়সীমা, আর কমেছে বাইরের প্রতিদিনের স্বাভাবিক চলাচল। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শুরু হয়েছে সন্তানদের অনলাইন ক্লাস, আর তার সাথে বেড়েছে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার। যেহেতু, না চাইতেও সন্তানদের ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে আমরা দূরে রাখতে পারবো না, তাই আমাদের জেনে রাখা ভালো, কী করে তাদের এই ইন্টারনেট ব্যবহারকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। তারই কিছু উপায় রয়েছে এখানে –

১. প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেই শিশুদের হাতে ডিভাইস ব্যবহারের জন্য দেয়া উচিত। গুগলের প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম ব্যবহার করে শিশুরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কি দেখছে, খুব সহজেই তা নজর রাখা সম্ভব।

তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, শিশুর হাতে দেয়া ডিভাইসটি চালু করতে যখন ই-মেইল অ্যাড্রেস দরকার হবে, আর তা যদি তা জি-মেইল হয়, সেক্ষেত্রে এটিকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাকাউন্ট হিসেবে খোলা যাবে।

স্বাভাবিকভাবেই শিশুর ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তার জন্ম তারিখটি যদি ১৩ বছরের নিচে হয়, তাহলে গুগল আপনা-আপনিই জানতে চাইবে ওই অ্যাকাউন্টটি প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের অধীনে হবে কিনা বা আপনি করতে চান কিনা। তখন ওই অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাবা কিংবা মায়ের একটা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট দেয়ার সুযোগ থাকে। এতে করে জি-মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে অভিভাবক জানতে পারবে যে তার সন্তান কী কী খুঁজলো, কী কী অ্যাপ ইন্সটল করলো, ইউটিউব-ফেসবুকে কী দেখলো-সব কিছু। এমনকি শিশুটি তার ডিভাইসটি নিয়ে কোথায় গেল, সে জায়গাটিও সহজভাবে জেনে নেয়া সম্ভব।

২. কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ ইন্সটল করা

প্যারেন্টাল সেফ ব্রাউজার নামে একটি অ্যাপ আছে, তা যদি সন্তানদের ডিভাইসে ইনস্টল করে রাখা যায়, তাহলে শিশুরা তাদের জন্য ক্ষতিকর অর্থাৎ অ্যাডাল্ট কোন ভিডিও বা কন্টেন্ট দেখতে পারবে না। এই অ্যাপটি মোবাইল, ল্যাপটপ বা পিসিতে ইন্সটল করা যায় সহজেই। আর যদি বাবা-মায়ের ডিভাইসে অ্যাপটি ইনস্টল করা হয়, সেক্ষেত্রে তা এনাবল-ডিসাবল করার অপশনও আছে, যা প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায়।

এছাড়া, সিকিউরিটি বিষয়ক আরও কিছু অ্যাপ আছে, যেগুলো ইন্সটল করে রাখলে অন্যান্য অ্যাপেও যাতে অ্যাডাল্ট অথবা ক্ষতিকর কন্টেন্ট না আসে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পিসি বা ল্যাপটপের ব্রাউজারে আলাদা ছোট প্লাগ-ইনস এর মতো ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’ ইন্সটল করে রাখলে সেটিও অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট আসা বন্ধ করে দেয়। এমনকি যদি সার্চও করা হয়, তাহলেও এ ধরণের কন্টেন্ট পাওয়া যাবে না। আর ফ্রিতেই পাওয়া যায় এসব ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’।

৩. চাইল্ড ভার্সন অপশনটির ব্যবহার

ফেসবুক এবং মেসেঞ্জার এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের চাইল্ড ভার্সন রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেয়া যায়, যা তারা ব্যবহার করলেও অভিভাবকদের সুপারভাইজ করার সুযোগ থাকে। ফেসবুক বা মেসেঞ্জারে শিশুকে কেউ যদি অনুরোধ বা রিকোয়েস্ট পাঠায়, তা অভিভাবকের কাছেও চলে আসবে। সেক্ষেত্রে অভিভাবক অনুমতি দিলেই শিশুটি চ্যাট করতে পারবে।

৪. ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার সময় সচেতনতা

যে কোম্পানির কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগটি নেয়া হবে, তাতে শিশুদের জন্য ‘সেফ ইন্টারনেট’ এর ফিচারটি আছে কিনা তা ভালো করে যাচাই করে নেয়া উচিত। এই ফিচারটি থাকলে কিছু সাইট বা কন্টেন্ট ব্লক করে দেয়ার ব্যবস্থা সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছেই থাকে। ওয়াইফাই সংযোগের জন্য আমরা যে অ্যাকসেস পয়েন্ট বা ডিভাইস, যেমন রাউটার ব্যবহার করে থাকি, সেগুলোর বেশিরভাগেই কিছু সুবিধা থাকে। যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারেও নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব। তবে, ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ডিভাইসগুলোর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড নিজে নিয়ে নিতে হবে। এর মাধ্যমে ল্যাপটপ থেকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের ফিচারগুলো এনাবল বা চালু করে দিলে এর উপর কন্ট্রোল থাকে।

৫. ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা

সব অভিভাবকদেরই উচিত তার সন্তান কতক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করবে তার একটা সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া। শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে ইন্টারনেট সংযোগ বাসায় কখন থাকবে, আর কখন থাকবে না সেটির একটা নির্দিষ্ট সময়ও নির্ধারণ করে দিতে হবে।

এক্ষেত্রে, যারা ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকেন তাদের পোর্টালে ঢুকে একটা আবেদনের মাধ্যমে সংযোগের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেয়া যায়। আবার এটি ব্যক্তি পর্যায়েও করা যায়। ভাল মানের যেসব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আছে তাদের কাছে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের ফিচারটি থাকে। যেখানে নির্ধারণ করে দেয়া যায়, কোন কোন ডিভাইসে কখন ইন্টারনেট থাকবে, কোন কোন কন্টেন্ট থাকবে, কোন কোন অ্যাপস থাকবে কোনটা থাকবে না।

এছাড়া ইউটিউব, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এবং বয়স নির্ধারণের ব্যবস্থা আছে। এটি চালু থাকলে কোনভাবেই কিছু কন্টেন্ট শিশুদের কাছে আসবে না।

৬. শিশুর সাথে অভিভাবকেরও অংশ নিতে হবে

অভিভাবক যখন নিজে শিশুর সাথে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় তাকে সঙ্গ দেবেন, তখন শিশুটি নিজেও উৎসাহিত হবে শিক্ষামূলক বিভিন্ন চ্যানেল এবং ওয়েবসাইট থেকে ভালো কোন কন্টেন্ট দেখার ও শেখার। তাদেরকে নতুন কিছু শিখতে বা তৈরি করতে আগ্রহী করে তুলুন।

ইউটিউব কিংবা অন্য সাইটগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে, একজন ব্যবহারকারী যে বিষয়গুলো দেখে, সেই ধরণেরই বিষয় বা কন্টেন্টগুলো পরামর্শ হিসেবে আসতে থাকে। আর এজন্যই শিশুদের আগ্রহ অনুযায়ী ভাল ও শিক্ষামূলক কন্টেন্ট দেখতে উৎসাহিত করলে তাদের কাছে সেসব কন্টেন্টই আসবে।

৭. অভিভাবক কী দেখছেন সে বিষয়েও সতর্ক হতে হবে

আমাদের দেশে সাধারণত বাড়িতে একটি ওয়াইফাই সংযোগ নেয়া হয় এবং তা বাড়ির প্রতিটি সদস্য শেয়ার করে ব্যবহার করে। প্রতিটি ওয়াইফাই ডিভাইসের একটা নির্দিষ্ট আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নম্বর বা অ্যাড্রেস থাকে। তখন বাড়ির বাবা-মা বা প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যরা যদি ওই ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করে শিশুদের জন্য ক্ষতিকর কিছু সার্চ করে বা দেখে, তাহলে সেগুলো ওই আইপি অ্যাড্রেসেই জমা হয়। তাই শিশুদের এ ধরণের কন্টেন্ট থেকে দূরে রাখতে ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদেরও সতর্ক হতে হবে।

তবে, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল জি-মেইল অ্যাকাউন্ট শিশুদের ডিভাইসে ব্যবহার করা হলে তাও অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট শিশুদের থেকে ফিল্টার করে দূরে রাখে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply