fbpx

‘সীমাবদ্ধতা আমাকে আটকাতে পারেনি’

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বিশ্বের খ্যাতিমান আলোকচিত্রীরা ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফারর্স গ্যালারিতে তাদের সেরা ছবি পাঠিয়ে থাকেন। প্রতিমাসেই অসংখ্য ছবি জমা হয় সেখানে। এর থেকে একটি আলোকচিত্র ‘ফটো অফ দা ডে’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়- গত  ৩ মার্চ এই সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন আলোকচিত্রী কমল দাশ। দু:খ দারিদ্র নয়, বরং নান্দনিক এক বাংলাদেশকে ধারণ করেছেন তিনি লেন্সে। অপ্রাপ্তির ভেতর এও দেশের এক বড় অর্জন। বিবিএস বাংলা’কে আলোকচিত্রী কমল দাশ বলেছেন সে ছবি তোলার গল্প।

চট্টগ্রামের দোহাজারীর আশেপাশে আছে বেশ কিছু চর। এখান থেকে শীতকালীন সবজি নিয়ে যায় ছোট ছোট অনেক নৌকা। নৌকাগুলোর গন্তব্য সাঙ্গু নদী দিয়ে রেলস্টেশন বাজার।

আমি বহুবার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে সকালে এই দৃশ্য দেখেছি। ফটোগ্রাফি করছি প্রায় ২৪ বছর পার হয়ে গেছে। ছবি তুলতে যাবো যাবো করে কখনোই আর যাওয়া হয়ে উঠছিলো না সেখানে। গত বছরও গিয়েছিলাম। বাজারঘাটের ছবি পেয়েছি। কিন্তু যে ধরনের ছবি আমার চোখে লেগে আছে, তেমন ছবি পাইনি। কিছুটা হতাশ ছিলাম তাই।

এ বছরের শুরুতে আবার যাই। এবারও পেলাম না। তখন ভাবলাম, হয়তো আমার ভাগ্য খারাপ। কিন্তু আমার চেষ্টায় কমতি ছিল না। আবার এ বছর দ্বিতীয়বার যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। সাথে বন্ধুবর ডিসি (ডিবি) মনজুর মোরশেদ, শুভ ধর, বন্ধুবর জসিম ভাইকে নিয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটায় রওনা দিলাম দোহাজারীর উদ্দেশ্যে।

সিদ্ধান্ত নেই ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে থাকব। ছবি পেলে পাবো, না পেলে নাই। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু সবজির নৌকার দেখা নাই। আমরা যারা ছবি তুলতে গিয়েছিলাম, তখন মনের মধ্যে একটা আফসোস কাজ করছিলো। তাহলে কি এইবারও ব্যর্থ! ঠিক তখন সকাল ৮টায় হঠাৎ দূরে দেখলাম সবজি ভর্তি নৌকা আসা শুরু হয়েছে। তেমন বেশি না তিন ঘন্টার অপেক্ষায় মাত্র আটটা নৌকা পাই। শান্ত শীতল ছায়ার সাঙ্গু নদীতে সকালের আলো এসে পড়েছে। ঝটপট করে কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। তার মধ্যে এই ছবিটি অন্যতম।

‘সীমাবদ্ধতা আমাকে আটকাতে পারেনি’

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সেই ছবি।

ছবি তুলেছি ঠিক। অনেকে এই ছবি ভালো বলেছেন, প্রশংসা করেছেন। ভালো লেগেছে শুনে। কিন্তু আমার ভেতরের কষ্টটা এই লেখা না লিখলে, না পড়লে হয়তো অনেকের অজানা থেকে যাবে। আমি ছবি তুলি কি করে? দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আমার কোনো ক্যামেরার লেন্স নেই। আমার লেন্সগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। সত্যি বলতে কেনার সামর্থ্য আমার নেই। আর কখনও কেনা হবে কিনা তাও জানিনা। ক্যামেরার বডি ভালো আছে। এখনও আমি যখন ছবির নেশায় ঘুরি। ছবি তোলার ইচ্ছে প্রকাশ করি। তখন আমাকে জীবন চালানোর জন্য যেটুকু টাকা আয় করি, সেখান থেকে প্রতিবার ছবি তুলতে গিয়ে দিন প্রতি ১০০০ টাকা করে লেন্স ভাড়া নিয়ে যেতে হয়। এই ছবি তুলতে যাওয়ার সময়ও আগের দিন অর্থহীন অবস্থায় শুধুমাত্র পকেটে থাকা ১০০০ টাকা দিয়ে লেন্স ভাড়া করে নিয়ে গিয়েছিলাম। গত পাঁচ বছর ধরে এ সামর্থ্যহীন আলোকচিত্রীর যত ছবি দর্শক দেখেছেন, সব কষ্টের টাকা থেকে ভাড়া করা লেন্সের। আসলে যখন একটি ছবির গল্প লিখতে হয় তখন, যখন সত্যটা লুকানো যায়না। তাই এখানে বলে প্রকাশ করলাম। ভালো লাগছে নিজের কষ্টের ছবির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে। বারবারই তো বলি, ‘আমি ছবি তুলি না। ক্যামেরায় প্রার্থনা করি।’ নিশ্চয়ই করুণাময় সে প্রার্থনা শুনেছেন। সীমাবদ্ধতা আমাকে আটকাতে পারেনি। এই নিয়েই গর্ব আমার।

Advertisement
Share.

Leave A Reply