fbpx

৮ ডিসেম্বর অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের প্রয়াণ দিবস

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

ভাষা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের সকল গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নেপথ্য রূপকারদের একজন অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ।

প্রয়াত এই বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদের জন্ম ১৯২৪ সালের ১ জুলাই। পিতা মুসলিম লীগের রাজনীতিবিদ আলী আহমদ খান ছিলেন প্রথমে অবিভক্ত বাংলা ও ১৯৪৭-এর পর পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ এর সদস্য।

অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জর্জ হাইস্কুলে। এরপর, ১৯৩৯ সালে প্রবেশিকা (বতর্মান এস.এস.সি) পরীক্ষায় পাস করে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে এফ. এ (ইন্টারমিডিয়েট) তে ভর্তি হন। কিছুদিন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজেও পড়াশুনা করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শুরু হয় তাঁর অধ্যয়ন। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৪৮ সালে। ডিগ্রি লাভের পরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

একই বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালেই শিক্ষকতার পাশাপাশি সংসার জীবনে প্রবেশ করেন তিনি। জীবন সঙ্গিনী হন নূরজাহান বেগম। যিনি স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আওয়ামী সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৯ সালে ইংরেজি ত্রৈমাসিক ‘নিউ ভ্যালুজ’ এর গোড়াপত্তন করেন খান সারওয়ার মুরশিদ। এ পত্রিকাটি ১৯৬৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এর কিছুদিন পরই তিনি পিএইচ.ডি’র জন্য চলে যান ব্রিটেনের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অধ্যাপক মুরশিদ ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ‘সংস্কৃতি সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন তিনি। রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন ১৯৬১ সালে। এরপর ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।

ড. খান সারওয়ার মুরশিদ ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পেশা বদল। শিক্ষকতা ছেড়ে তারপর পোল্যান্ডে এবং একইসঙ্গে হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয় ১৯৭৫ সালে।

মুরশিদের বরাবরই প্রিয় বিষয় ছিলো চিত্রকলা। আর তাই পোল্যান্ডে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশের চিত্রকলার প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। সে সময় স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে তিনি দেশের অনেক শিল্পীকেই সেখানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।

দু’বছর বা তার একটু বেশি সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে মুরশিদ চলে যান লন্ডনে কমনওয়েলথ সচিবালয়ে সহকারী মহাসচিবের পদে। তার পাঁচ বছর পর ফিরে আসেন তাঁর দীর্ঘকালের মানস ঠিকানা, আধ্যাত্মিক আশ্রয় এবং সংগ্রামের কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার বছরখানেক পর তিনি অবসর নিলে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করে।

পরবর্তীতে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত গণ-আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত গণতদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২০০৪ সালে তাঁর হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়। ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে অক্টোবরে তাঁকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও তিনি বেশ কয়েকবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

পরে সেপ্টেম্বরের শুরুতে সম্পূর্ণ নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাঁকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়।

৮ ডিসেম্বর ২০১২ সালের অপরাহ্নে অ্যাপোলো হাসপাতালে ৯৬ বছর বয়সে মহান এই বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ মৃত্যুবরণ করেন।

অধ্যাপক মুরশিদ তাঁর জীবনে অনেক সম্মাননা অর্জন করেছেন। তারমধ্যে, ২০১০ সালের “বাংলা একাডেমি পুরস্কার” তাঁর জীবনের অন্যতম প্রাপ্তির একটি। এছাড়া, ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে “আজীবন সম্মাননা”, ২০০৬ সালে “জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক”, ২০০৮ সালে “কণ্ঠশীলন পুরস্কার” লাভ করেন।

অধ্যাপক মুরশিদের উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে ২০০৪ সালে প্রকাশিত “কালের কথা” অন্যতম।

অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের মতো সংবেদনশীল ও প্রজ্ঞাবান এক দেশপ্রেমিকের প্রয়াণ দিবস ছিল ৮ ডিসেম্বর। তাঁর প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply