fbpx

অনলাইন ক্লাস, কতটা শিখছে বাচ্চারা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement
অনলাইন ক্লাস, কতটা শিখছে বাচ্চারা

বেসরকারি একটি স্কুলের নোটিশ, ছবি: সংগৃহীত

উপরের নোটিশটির মতো হাজারো নোটিশ পড়ে আছে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যেগুলো শুধুই কালের সাক্ষী হয়ে গেছে, হয়ে আছে একান্তই স্মৃতি।

করোনার তাণ্ডবে সবচেয়ে বিপযর্য়ের মুখে রয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। করোনা মহামারিতে সতর্কতা, সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে এবং এখনো তা খোলেনি।

একেবারেই বিনা লেখাপড়ায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে ঝরে গেছে ‘নিস্ফলা’ একটি বছর।

হচ্ছে না পড়ালেখা, শিক্ষার্থীরা সময় পার করছে ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা চ্যাটিং করে। শুরুতে করোনা সংক্রমণ, এর ধরণ, বিস্তার ও ভয়াবহতা সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ধরেই নিয়েছিলো দুই থেকে তিন সপ্তাহ অথবা খুব বেশি হলে মাস খানেকের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বারবার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছিল সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার, মাস্ক ব্যবহার করার, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার। খুব জরুরি কাজ না থাকলে বাইরে না যেতে, জন-সমাগম এড়িয়ে চলতে। কিন্তু, করোনা সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে তার সংক্রমণ ক্ষমতা, ধরণ পাল্টেছে; দিনে দিনে বেড়েছে আক্রান্তের হার। আর এখন এই হার আগের চেয়ে ঊর্ধ্বমুখী।

অতঃপর, পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে গত ১৬ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে প্রায় সব সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, এই সাধারণ ছুটির মেয়াদ দু’মাসেরও বেশি সময় ছাড়িয়ে যাবে সেটি অনেকে ভাবতেই পারেন নি।

সরকারি ছুটির মেয়াদ দফায় দফায় বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে অর্থনীতি সচল রাখতে দেশের সরকারি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রথমে কর্ম ঘণ্টা কমিয়ে এনে খুলে দেয়া হয়। আর জীবনে বেঁচে থাকার বাস্তবতায় একে একে সকল অফিস-আদালত, হাট-বাজার, দোকান-পাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পরিবহন, রেল, নৌ- বিমান পথ খুলে দেয়া হয়। কিন্তু, খোলা হয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন স্তরের জন সমাগম হয়- শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। এর ফলে করোনা ছড়াবে ব্যাপকভাবে।

এ বাস্তবতায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়লে চালু করা হয় অনলাইন ক্লাস। কিন্তু তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে- কতটা লাভ হচ্ছে এতে? এ নিয়ে আমরা প্রথমে ঢাকার একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকের সাথে কথা বলি। তার কাছে প্রশ্ন ছিল- অনলাইন ক্লাস কতটা কাজে লাগছে শিক্ষার্থীদের। জবাবে তিনি জানান, “করোনার প্রাদুর্ভাবে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা যাচ্ছিল না তখন অনলাইন ক্লাস নেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়। প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল- শিক্ষার্থীদের কিছুটা হলেও দৈনিক লেখাপড়ার সাথে যুক্ত রাখা। সেক্ষেত্রে এটি ছিল নিশ্চয়ই একটি মহৎ উদ্যোগ। তবে এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাও আছে। গ্রাম এলাকায় ইন্টারনেটের সুব্যবস্থা নেই, অনেক জায়গায় নেটের গতিও কম। আবার অনলাইনে ক্লাস করতে হলে ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা উন্নতমানের মোবাইল ফোন থাকা জরুরি। এগুলো অনেক শিক্ষাথীর কাছেই নেই। ফলে, শহরের বাইরে অনলাইন ক্লাস বা শিক্ষাব্যবস্থা খুব একটা কর্যকর হচ্ছে না বলেই মনে হয়।”

করোনার প্রাদুর্ভাব দীর্ঘায়িত হয়ে যখন একটি শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে চলেছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই নতুন ক্লাসে ওঠার প্রশ্ন আসে। ক্লাস হয়নি সারা বছর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যাচ্ছে না। তাহলে নতুন ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার পদ্ধতি কী হবে?

এ নিয়ে নানা চিন্তাভাবনার পর সরকার অ্যাসাইনমেন্ট জমা ও তা মূল্যায়নের ভিত্তিতে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। সেভাবেই চলছে নতুন ক্লাসে ওঠার তোড়জোড়। কিন্তু এখানেও দেখা দিয়েছে ভিন্ন সমস্যা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে- শহর এলাকার অনেক বাসা-বাড়ির গৃহশিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাসাইনমেন্ট নিজেই তৈরি করে দিচ্ছেন, যাতে পাস ও ভালো ফল নিশ্চিত হয়। আবার এমনও দেখা যাচ্ছে-  একজন শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্ট প্রস্তুত করলে সেটা দেখে দশজন প্রস্তুত করছে। অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির জন্য বই ঘাটাঘাটি একদমই নেই। ফলে, মেধার যাচাই দারুনভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

একদিকে, সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা মাঝে মধ্যেই বলছে। অন্যদিকে, করোনার নতুন ঢেউ আসার আশঙ্কায় সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারছে না। এরইমধ্যে, পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোকে করোনা পরিস্থিতি আবারও বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে।

আমাদের দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের করোনা অসচেতনার কারণে বেড়েই চলেছে এর বিস্তার। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া কতটা বাস্তবসম্মত হবে সেটিও ভাবার বিষয়। যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা না যায়, তাহলে কী আরও একটি বছর ঝরে যাবে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে? এ প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply