fbpx

অবসর বিতর্ক, কিংবদন্তি ম্যাস কি সম্মানজনক বিদায় প্রাপ্য নন?

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

তবে কি শেষ হয়ে গেল মাশরাফী-উপাখ্যান? গত বছর মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার পর দেশের মাটিতে পরের ওয়ানডে সিরিজেই দলে জায়গা হারালেন পেসার মাশরাফী বিন মর্তুজা।

মাশরাফী দলে না থাকায় অগনিত ভক্ত ও সমর্থক হতাশ। ক্ষুব্ধ, মনোক্ষুন্ন। তাদের দাবি, মাশরাফী গত মাসে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন। তাই তাকে দলে নেয়াই যেত। বিশ্বকাপ ২০২৩ পর্যন্ত না হোক, বিসিবির দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় না থাকুন, তার পক্ষে তো আরও কিছু দিন খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাই তাকে দলে রাখাই যেত।

দেশের ক্রিকেটের নামী ব্যক্তিত্ব নাজমুল আবেদিন ফাহিমও তাই মনে করেন। বিকেএসপির জন্মলগ্ন থেকে অনেক দেশ বরেণ্য অনেক ক্রিকেটারের গুরু, মেন্টর , শিক্ষক এবং ক্রিকেটারদের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ফাহিম মনে করেন, মাশরাফীর মত ক্রিকেটারের বিদায়টা সম্মানজনক হওয়া বাঞ্চনীয়।

তবে তার সোজা-সাপ্টা কথা, ‘মাশরাফী সন্দোহতীতভাবেই আমাদের দেশের ক্রিকেটে অনেক বড় তারকা। দক্ষ ও সফলতম অধিনায়ক। দুর্দান্ত পারফরমারও। দেশের সব সময়ের অন্যতম সেরা বোলার। এত বড় তারকা ও সফলতম পারফরমারের মাঠের বাইরে থেকে অবসর মোটেই ভালো দেখায় না। তার মেধা, প্রজ্ঞা, প্রাপ্তি, অর্জন আর জাতীয় দলের জন্য অবদানের কথা চিন্তা করলে সেটা বেমানান।’

অবসর বিতর্ক, কিংবদন্তি ম্যাস কি সম্মানজনক বিদায় প্রাপ্য নন?

ছবিসূত্র : ফেইসবুক

‘তাই মাশরাফী যদি জাতীয় দল থেকে অবসরের ইচ্ছে প্রকাশ করে থাকে, তাহলে তাকে সম্মানের সাথে মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার সুযোগ করে দেয়া উচিত। তাতে করে একজন অনেক বড় মাপের ও সফল ক্রিকেটার তার সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারটা সম্মানের সাথে শেষ করতে পারবে।’

মাশরাফী কি কখনো বোর্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে জাতীয় দলের ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খান গণমাধ্যমকে জানান, ‘নাহ , আমার জানা মতে মাশরাফী বোর্ডের কাছে কখনই অবসরের ইচ্ছে প্রকাশ করে কোনো চিঠিও দেয়নি। আমাদের বা নির্বাচকদের কাছেও অবসরের কথা বলেনি। বললে অবশ্যই একটা পথ বের করা যেত, যাতে সে মাঠ থেকে অবসর নিতে পারে।’

নাজমুল আবেদিন ফাহিমও মানছেন, মাশরাফীর যা বয়স, তাতে করে আর বেশিদিন জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব না। তবে তাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে অন্তত একটি বা দুটি ম্যাচ খেলিয়ে অবসরে যাবার সুযোগ করে দেয়া যেত বলে মনে করেন তিনি।

নামী ক্রিকেট বোদ্ধা ও কুশলী টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নাজমুল আবেদিন ফাহিম একা নন, মাশরাফীর অগণন ভক্ত ও শুভাকাঙ্খী মনে করেন, মাশরাফী বিসিবির দীর্ঘ পরিকল্পনায় না থাকলেও তাকে অল্প কয়েকটা ম্যাচ সুযোগ দেয়া যেত।

দলের অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন আজ অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘বোলার মাশরাফী স্টিল গুড (এখনও যথেষ্ট ভালো)।’ তাহলে তাকে দল থেকে এত তাড়াতাড়ি ছেঁটে ফেলা হলো? প্রশ্ন উঠতেই পারে।

এদিকে ভেতরের খবর অন্য, মাশরাফী নিজে থেকে নাকি অবসরে যেতে অনিচ্ছুক। তার কথা, ‘আমি কেন যেচে অবসরের ঘোষণা দেব? কেন বলবো আমি অমুক দিন খেলা ছেড়ে দিতে চাই!’

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট চলাকালীন বোর্ড পরিচালক ও জাতীয় দলের সাবেক ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের সাথে একান্ত আলাপে মাশরাফী বলেছেন, তিনি খেলা চালিয়ে যেতে চান। নির্বাচকরা তাকে যোগ্য মনে করলে বিবেচনা করবেন, না হলে করবেন না।

মাশরাফীর অবস্থান থেকে তিনি অবশ্য ঠিক। বোর্ড কেন তাকে সময় বেঁধে দেবে? অবসর নেয়া, না নেয়া একান্তই তার ব্যাপার। সচেতন ক্রিকেট অনুরাগীরা মনে করেন, বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন এবং বিসিবির শীর্ষকর্তারা মাশরাফীর সাথে বসে বিষয়টির ইতিবাচক সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারতেন। তাতে করে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক তার অবদানের স্বীকৃতি পেতেন।

প্রসঙ্গত, গত বিশ্বকাপ শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, মাশরাফীর বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সব কিছুই করা হবে। দেশের ক্রিকেটের সব সময়ের সেরা ও সফলতম অধিনায়ক যাতে সম্মানের সাথে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করতে পারেন, তার বিদায়টা যেন হয় ঘটা করে, বিসিবি সেই ব্যবস্থা করবে।

কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে প্রশ্ন উঠছেই- মাশরাফীর ভাগ্যে কি অমন রাজকীয় বিদায় জুটবে? নাকি পূর্বসূরীদের মত মনের দুঃখ-কষ্ট আর অব্যক্ত যন্ত্রণা নিয়ে মাঠের বাইরে থেকেই ইতি ঘটবে এত বড় ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার?

বাংলাদেশে বড় ক্রিকেটারদের ঘটা করে বিদায় দেয়ার রীতি খুব একটা নেই। আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আকরাম খান, হাবিবুল বাশার সুমন, নাইমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাসুদ পাইলট আর খালেদ মাহমুদ সুজনের মত জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও তারকা ক্রিকেটারও মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেননি। এছাড়া অনেক মেধাবী ও যোগ্য ক্রিকেটারের বিদায়টাও সুখকর ছিল না। মাশরাফীর শেষটাও কি এমন আক্ষেপময় হবে?

সচেতন ক্রিকেট অনুরাগীদের পক্ষের মত, মাশরাফী বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক প্রবাদপ্রতিম চরিত্র। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক ও সফলতম পেসার। তাকে সম্মানজনক বিদায়ের ব্যবস্থা করা যেত। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এ জীবন্ত কিংবদন্তি যাতে মাঠ থেকে অবসর নিতে পারেন, সে সুযোগ করে দেয়া যেত।

লেখক : আরিফুর রহমান বাবু, ক্রীড়া সংবাদিক

Advertisement
Share.

Leave A Reply