fbpx

অমিতাভ-সন্ধ্যার আলো

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

রাত নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছিল, অমিতাভ পালের মতোই। অমিতাভ পাল। কবিতায় তিনি ভীষণ স্মার্ট, গল্পে সিদ্ধ। গত ১৩ অক্টোবরে উধাও হলেন নেত্রকোনায় গিয়ে। কয়েকদিন আগে এ কথাই ফোনে জানালেন কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, ‘চলো শুক্রবার সন্ধ্যায় বসি।’ সেই সন্ধ্যা ছিল ‘অমিতাভ-সন্ধ্যা’।
খুবই ঘরোয়া আয়োজন। আমাদের স্বজন অমিতাভ পালকে আমরা কীভাবে মনে রাখতে পারি? তাঁর কবিতা ও গল্পের ভেতরে পাঠক হিসেবে ঢুকতে পারি। একবার-বারবার দেখে আসতে পারি, এ জগতে অমিতাভ পালের বিচরণকালীন ভাবনা-সমুদ্দুর। অনেক কথা হচ্ছিল কাল, সন্ধ্যায়, যে সন্ধ্যা গড়িয়ে পড়ল রাতে, রাত কোন দিকে নিয়ে গেল আমাদের?

কবি মাসুদুজ্জামান, কবি ও কথাসাহিত্যিক কাজল শাহনেওয়াজ, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি ও কণ্ঠশিল্পী হাসান মাহমুদ, কবি শামীমুল হক শামীম, কবি ফেরদৌস মাহমুদ, কবি হিজল জোবায়ের, কবি মামুন খান, কবি ও কণ্ঠশিল্পী অতনু তিয়াস, কবি বিল্লাল মেহদী, কবি মিছিল খন্দকার, ধ্রুপদমুখী কণ্ঠশিল্পী জাফর আহমেদ_এবং আমি তো ছিলামই। আরও কেউ নিশ্চয়ই ছিল। আরও কেউ কেউ থেকে যায়, যারা জল না ঢাললে আমাদের গলা শুকিয়ে যায়। আমাদের উপস্থিতির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কবি অমিতাভ পালকে মনে করে মহানগরীর ছিন্নভিন্ন ব্যস্ততার মধ্যেও কবিসঙ্গ করা। তা আমরা করেছি। আমরা প্রায় সকলেই স্বীকার করে নিয়েছি, অমিতাভ পালের লেখালেখির প্রাপ্যটুকু আমরা দিতে পারিনি। আমরা কার্পণ্য করেছি। ভালো লেখা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে সাময়িকীগুলোর বড় একটা ভূমিকা থাকে, নইলে লেখক আড়ালেই থেকে যান। সেই সাময়িকীগুলো যখন অবহেলা করে, কবির অভিমান হয়।

কবি অন্তরালবাসি হয়ে যান। কবি হারিয়ে যান। অনলাইন মাধ্যম আর কয়দিন আসছে? ভালো লিখেও অমিতাভ পাল পাঠকের কাছে এত কম পৌঁছলেন? আমরা আরও অনেকের লেখালেখির প্রতিই উদাসীন থেকে যাই, যা স্রেফ অবহেলা, একপ্রকার অন্যায়। সমস্ত অবহেলার বিপরীতে অমিতাভ পাল বলেছেন, ‘আমি এখন যেখানে আছি, তোমরাও একদিন সেখানে এসে আমার মতো দাঁড়াবে।’

কথা হচ্ছিল। কথা শেষ হয়ে যায়। শুরু হয় গান। অতনুর গলায় ভিজতে থাকে মেঘ। সেই মেঘ গলায় ঢালি আমরাও। ওহ, অমিতাভ দা থাকলে বলতেন, ‘কি মিয়া, আমারে রাইখা নিজেরাই? ঢালেন ঢালেন।’ গানে মেতে ওঠে হাসান, মাতায় অন্যদেরও। জাফর গলায় চড়িয়ে দিল, পুরাতনী, রাম বসুর টপ্পা, মনে রইল সই মনের বেদনা…’

অমিতাভ-সন্ধ্যার আলোরাত টলে টলে যাচ্ছিল। রাত কোথায় যাচ্ছিল? জানি না। অমিতাভ দা, সত্যিই আমাদের আর কোনোদিন দেখা হবে না?
বাংলাদেশের আশির প্রজন্মের কবিতা যে ঋদ্ধি ও বৈচিত্র্যের জোগান দিয়েছে, তাতে সুস্পষ্ট অবদান আছে অমিতাভ পালের। ১৯৮৯ সালে নতুন বাল্বের আলো কাব্যগ্রন্থটির মাধ্যমে ঘটেছিল তার দীপ্তিময় আত্মপ্রকাশ। পরে আলোর আলোচনা (১৯৯২), আমার আত্মীয়-স্বজন (১৯৯৮), গণবেদনার গাথা (২০০৪) প্রভৃতি বইয়ের ভেতর দিয়ে তিনি কবি হিসেবে আরও পরিণতমনস্কতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

ছোট গল্পকার হিসেবেও অমিতাভ ছিলেন ব্যতিক্রম, বিষয়বস্তু ও রচনারীতি উভয় দিক থেকেই। তাঁর রাতপঞ্জি ও অসচরাচর শিরোনামের গল্পের বই দুটিতে তিনি কথাসাহিত্যিকসুলভ সামর্থ্য অনেকখানি দেখাতে পেরেছেন কিন্তু অনেক পাঠকের কাছে হয়তো পৌঁছেনি। অমিতাভ-স্মরণ সভায় তাঁর সব রচনা প্রকাশের ব্যাপারেও যথযথ উদ্যোগ নেওয়ার আলোচনা করা হয়। কেন না, শেষ পর্যন্ত কবি মরে গেলেও বেঁচে থাকবে তাঁর কবিতারা, গল্পেরা।

অমিতাভ দা ও আমি সমকাল পত্রিকায় সহকর্মী ছিলাম একদা। শাহবাগ-ছবির হাটে প্রায়শই দেখা হতো। আমাদের আড্ডা ছিল কবিতার, কথাসাহিত্যের, সিনেমার। একটা দারুণ বোঝাপড়া ছিল। বোঝাপড়াই তো প্রেম।
অমিতাভ দা, শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীকে যেমন সবসময় চিয়ার্স করে থাকি যে কোনও পানশালায় বসে, আপনাকেও চিয়ার্স জানিয়ে যাব। যতদিন পানশালা থাকে, যতদিন আমরা থাকি…

Advertisement
Share.

Leave A Reply