fbpx

আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে: সেমিনারে অভিমত

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

দেশে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। গত আট মাসে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। দিন দিন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। কেন বাড়ছে, এর পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে উঠেছে।

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ডেইলি স্টার সেন্টারে ‌‘কাজের মাঝে জাগাই আশা’ প্রতিপাদ্যে ‘হাউ টু হ্যান্ডেল আ সুইসাইডাল পেশেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

‘ইনার হুইল ক্লাব অব ঢাকা নর্থ-ওয়েস্ট-৩৪৫’-এর সহযোগিতায় ব্রাইটার টুমরো ফাউন্ডেশন (বিটিএফ) এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারের অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, একসময় আমাদের সমাজে অনেক কুসংস্কার ছিল, যা সময়ের প্রয়োজনে ধুয়েমুছে গেছে। কিছুদিন আগে জেনেছি সিরাজগঞ্জে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এর কারণ খোঁজা প্রয়োজন। আমি মনে করি, আত্মহত্যা রোধে শিক্ষার্থীদের পাশে শিক্ষক-অভিভাবকদের দাঁড়াতে হবে। তাদের সংবেদনশীল মনকে মানিয়ে নিতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের পাশে থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্রী হোস্টেলেও এই সুবিধা রাখা হয়েছে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। যে কারণে সমস্যা থেকে উঠে আসতে পারছি না। তাই আত্মহত্যা রোধে শিক্ষক-অভিভাবক ও সরকারকে এর কারণ খুঁজে কাজ করতে হবে।

আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়ে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ধর্ষণ বা এ ধরনের নির্যাতনের বিষয়ে মেয়েরা থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে তাদের অনেকাংশে হয়রানিতে পড়তে হয়। এসব ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে দেখি টোটাল পিকচারটা আমাদের সামনে উঠে আসছে না। পাশের দেশে কতজন শিক্ষক দারিদ্র্যের জন্য আত্মহত্যা করছে, তা জানতে পারি। আত্মহত্যাকারীদের মনের ভেতর কী ঘটে? এ জন্য মানসিক সমস্যা আত্মহত্যা বা জোন রোগকে ঘটিয়ে দেয়। অর্থনৈতিক বিষয়টি জড়িত। শিশুদের মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠছে বলেই তারা তাদের আত্মহত্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ বলেন, জীবনের পথে নানা বাঁক আসবে। সেগুলো থেকে কীভাবে বাঁচতে হবে, তা শিখতে হবে। শিক্ষার্থীদের জীবনে প্রেম-বিচ্ছেদ আসবে। কিন্তু কখন কোন বয়সে আসবে, সেটা বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বাবা-মায়ের বারণ সন্তানদেরও শুনতে-বুঝতে হবে। পৃথিবীর অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি আত্মহত্যা থেকে ফিরে এসেছেন। পরে তারা জীবনে সফল হয়েছেন। তারা যদি নিজেদের আগেই মেরে ফেলতেন, তাহলে কি তাদের সফলতা দেখতাম? আমাদের জীবনে প্রতিবন্ধকতা থাকবে। সেগুলো সামলে এগিয়ে যেতে হবে। নিজেদের সমস্যা সমাধানে আলোচনার মাধ্যমে চেষ্টা করে যেতে হবে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, ঘরে ওয়াইফাই আমরা অভিভাকরাই এনেছি। আমরাই সন্তানদের থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছি। তাদের হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়েছি। এসব আমাদের সন্তানদের মধ্যে বিষণ্নতা বাড়িয়েছে। এখন সেই বিষণ্নতা কাটাতে পরিবারকেই পাশে দাঁড়াতে হবে। নিজের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা শেখাতে হবে, সৃজনশীলতা, মননশীলতায় নিবেদিত হতে শেখাতে হবে। তাদের খেলাধুলা করতে হবে। ধর্মীয় বিষয়টিকে ধারণ করতে হবে।

কেন, কী কারণে বিষণ্নতা তৈরি হয়েছে, তা খুঁজে বের করে আলোচনা করতে হবে। কষ্টের জায়গাটা থেকে বেরিয়ে আসতে ইতিবাচক কোনও চর্চা করতে হবে। মনোচিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আবেগ-অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর একটি আত্মহত্যার খবরকে সংবাদমাধ্যমে হাইলাইট করে পরিবেশন না করা, ঘটনার পুরো বর্ণনা তুলে না ধরার বিষয়েও সতর্ক থাকা জরুরি বলে মনে করেন ডা. আজিজুল ইসলাম।

এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিষণ্নতা তৈরির বড় কারণ। এ জন্য অন্তত ১৮ বছরের আগে কাউকে এসব মাধ্যম ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়। সরকারের এ বিষয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে।

আত্মহত্যার পেছনে যেসব কারণ:
৯০ শতাংশ আত্মহত্যার মূল কারণ মানসিক রোগ। এ ছাড়া সামাজিক অবক্ষয়, সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব বেড়ে যাওয়া, পরিবার থেকে সময় কম পাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্ষণ, প্রেমের সম্পর্কে বিচ্ছেদ, চাকরির সংকটসহ প্রভৃতি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বলেও সেমিনারে জানানো হয়েছে।

আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায়:
জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ‌‘আত্মহত্যা’কে চিহ্নিত করতে হবে। এ ছাড়া জনসচেতনতা বাড়ানো ও হেল্প লাইন গড়ে তুলতে হবে। সংবাদমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আত্মহত্যার বিষয়টি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে পরিবারটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবারের কেউ যাতে প্রকাশিত সংবাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ ছাড়া বিষণ্নতায় ভোগা ব্যক্তির মানসিক রোগ-সংক্রান্ত সহযোগিতা বাড়াতে হবে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যাদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি:
বিষণ্নতা, মানসিক রোগ, মাদক গ্রহণ, আগে আত্মহত্যার চেষ্টা, আত্মহত্যার পারিবারিক ইতিহাস, বাসায় আগ্নেয়াস্ত্র থাকলে, হতাশা, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকারসহ প্রভৃতি কারণে লোকজনের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি থাকে।

উপস্থাপিকা নাজনীন মুন্নির সঞ্চালনায় বিটিএফের সভাপতি জয়শ্রী জামানের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য দেন আমিরুল রহমান বাচ্চু, সাজেদা আক্তার প্রমুখ। এ সময় জুয়েল তারিফ ও নিরঞ্জন মোহন নামের দুই সংগঠককে ‘অর্গানাইজার অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

Advertisement
Share.

Leave A Reply