fbpx

 আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস আজ, কেমন আছে দেশের পাহাড়?

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement
বিশ্বজুড়ে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও প্রাণ- প্রকৃতির টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতি বছর বিশ্বে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। এ দিবসের প্রেক্ষিতে তাই খোঁজ নেওয়া, কেমন আছে দেশের পাহাড় ও পার্বত্য অঞ্চল?
 আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস আজ, কেমন আছে দেশের পাহাড়?
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইড প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন মাফিক জানা যায়, দেশে মোট ভূমির এক পঞ্চমাংশ জুড়ে আছে পাহাড়ি অঞ্চল। কম উচ্চতার পাহাড় আছে সিলেটে। টিলা নামে যা পরিচিত। আর দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের পুরোটাই পাহাড়ময়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,গত এক যুগে পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। পাহাড়ের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে নির্মাণ করা হয়েছে একের পর এক সড়ক। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি-অবকাঠামো। এতে ভূতাত্ত্বিক গঠন নষ্ট হয়ে পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে অতিবৃষ্টি যোগ হয়ে বড় ধরনের ধস ও বিপর্যয় ঘটছে।
 আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস আজ, কেমন আছে দেশের পাহাড়?
সিইজিআইএস এবং ওয়াটারএইড এর যৌথ গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক যুগে তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন ধরনের বনভূমি কমেছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৬ হেক্টর। গণমাধ্যমে প্রকাশ বার্তায়ও তা উঠে আসে। পার্বত্যাঞ্চলে প্রায়ই পাহাড় কাটার খবর শোনা যায়। ফলে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ত্বরান্বিত হওয়াসহ পাহাড়ি পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও পরিবর্তিত হচ্ছে জনপদের নদীর গতিপথ ।
স্থানীয়রা জানান, ইতোমধ্যে পার্বত্যাঞ্চলে ‘উন্নয়ন’ এর ছোঁয়া লাগায় সেখানে এসেছে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন। আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস আজ, কেমন আছে দেশের পাহাড়?
পর্যটন বাণিজ্যের নামে নষ্ট হয়েছে পাহাড়ের নিজস্ব স্বত্ত্বা।
পরিবেশবিদরা বলছেন,পার্বত্য জেলাগুলোর মাটির গঠনবিন্যাসের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্বিচার পাহাড় কাটা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অতিবৃষ্টির চাপ। এতে করে পাহাড়ের ওপরের অংশের শক্ত মাটির স্তর বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে পাহাড়ের মধ্যে ফাটল ।
দেশের তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বনভূমি ও পানির উৎস পরিবর্তনের ধরণ নিয়ে সিইজিআইএস এবং ওয়াটারএইডের যৌথ গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ২০০৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পার্বত্য এলাকায় ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়েছে। আর ৬১ শতাংশ পাহাড়ি ঝরনা শুকিয়ে গেছে। এর ফলে এই অঞ্চলের পাহাড়ের মাটির বুনন নষ্ট হয়ে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
 আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস আজ, কেমন আছে দেশের পাহাড়?
একই সময়ে সেখানে কৃষি জমি বেড়েছে ২৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ভূ-উপগ্রহ থেকে নেওয়া ভূমির স্যাটেলাইট ইমেজ এর ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি করা হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যমাফিক, পৃথিবীর প্রায় এক দশমাংশ মানুষ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করেন। আর এই পাহাড়, পর্বতমালা দেয় বিশ্বের প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক স্বাদু পানি। এই পাহাড় পর্বত বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী ধারণ করে আসছে। প্রকৃতির প্রাণ ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় যা অটুট রাখার কোনো বিকল্প নেই। তাই পর্বত দিবস একটি আনুষ্ঠিকতা হয়েই অতিক্রান্ত হচ্ছে দেশে। রাজনৈতিক বিবাদ, পাহাড়ে বাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ণের সঙ্গে বিলীন হচ্ছে এদেশের মানচিত্রে পাওয়া অল্পটুকু পাহাড়ি সবুজ। স্পষ্ট হচ্ছে এই সত্য যে, ভালো নেই দেশের পাহাড়, দেশের সবুজ।
Advertisement
Share.

Leave A Reply