fbpx

আবারও শোয়েব শাদাব

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

গত ১৩ মার্চ শনিবার মুক্তাগাছা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে আরারও ত্রিশালের সাখুয়া ইউনিয়নে শাহ মো. গোলাম কিবরিয়া ওরফে কবি শোয়েব শাদাবের বাড়ি পৌঁছি দুপুর বারোটার দিকে। এবারের সহযাত্রী গত ৬ ফেব্রুয়ারি যখন এসেছিলাম তার মধ্যে কবি আযাদ নোমান, মাহবুব কবির ছাড়াও কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন এবং কবি আশিক আকবর। বাড়িতে এবার পেয়ে গেলাম শাদাবের ১০৫ বয়সী বাবা, তার ছোট ভাই বর্তমানে সাখুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. গোলাম ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়ার স্ত্রীকে। ভাবীর নামটি এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তাদের ছেলে বর্তমানে পাইলট হিসেবে চাকরী করছে এবং তাকে বিয়ে করিয়েছেন কিছুদিন আগে। মোবাইলে ছেলে এবং বউয়ের ছবি দেখালেন ভাবী, দুজনেই খুবই স্মার্ট। তাদের মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ইয়াহিয়া ভাই এবং ভাবী তাদের পরিবার নিয়ে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকেন।

চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে ইয়াহিয়া ভাইকে সাকোয়া এবং ঢাকা দু’জায়গায়ই থাকতে হয়। ইয়াহিয়ার সাথে যখন ভাবীর বিয়ে হয় তখনই শাদাব সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত। তখন থেকেই শাদাবকে বড় ভাইয়ের মতো সেবা-শুশ্রূষা করে আজ প্রায় সুস্থতার পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন ভাবী, আর ভাই হিসেবে ইয়াহিয়া তো সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছেনই। ভাবী আমাদেরকে কথা দিলেন, শাদাবকে নিয়ে ‘লোক’ এর যে সংখ্যা বেরুচ্ছে সেখানে তিনি লেখা দেবেন।

আমরা ইয়াহিয়া ভাইকে বললাম, ১৯ মার্চ ঢাকায় শোয়েব শাদাবকে নিয়ে অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু দরকারী আলাপ সেরে চা খেয়ে আমরা চলে যাবো। কিন্তু দুপুরে না খাইয়ে তিনি কিছুতেই ছাড়বেন না, বললেন আপনাদের ভাবী অনেক কষ্ট করে আপনাদের জন্য রান্না করেছেন। দু’তিন দিন আগেই আমরা জানিয়েছিলাম যে, ১৩ তারিখ আমরা আসবো। মুক্তাগাছা থেকে রওয়ানা দেবার সময়ও ফোনে জানিয়েছি যে, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আমরা আসছি।

মুক্তাগাছা থেকে আমাদের জন্য কবি রাজিয়া সুলতানার দেয়া মণ্ডা এবং ময়মনসিংহ থেকে আরও কিছু মিষ্টি ও শাদাবের জন্য দুই প্যাকেট সিগারেট নিয়ে আমরা তাদের বাড়িতে ঢুকি। সিগারেট পেয়ে শাদাব খুবই খুশি। কিন্তু প্যাকেট না খুলে আমাদের কাছ থেকেই একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে বাবার সামনেই। তাতে আমাদেরও খুব ভালো লাগছে। আমাদের সিগারেটও যখন শেষ তখন সেই প্যাকেট খুললো সে। গতবারের চেয়ে আজ তাকে খুব প্রাণবন্ত মনে হচ্ছে। বাজার থেকে নাপিত এনে সেভ করানো হয়েছে। পারভেজ ভাইকে আমি আগেই বলে রেখেছি, আপনার পরিচয় প্রথমে দেবেন না, আপনাকে চিনতে পারে কিনা পরীক্ষা করবো।

উল্লেখ্য, শোয়েব শাদাব, আযাদ নোমান, পারভেজ হোসেন তিনজনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার ছাত্র, পারভেজ ভাই তাদের এক ইয়ার সিনিয়র। কথা অনুযায়ী প্রথমে পরিচয় না দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। চিনতে না পারায় পারভেজ ভাই বললেন- পারভেজ হোসেন নামে কাউকে চেনো, শাদাব? মুহূর্তেই পারভেজ হোসেনের হাত ধরে বললেন, পারভেজ ভাই আপনি আইছুইন? এবং পরক্ষণেই জিজ্ঞাসা করলেন, মিঠু কেমন আছে? তার মানে পারভেজ-মিঠু যে জোড়মানিক ছিল এটা তার স্মরণে আছে।

উল্লেখ্য, আশির দশকে পারভেজ হোসেন ও শহিদুল আলম (মিঠু)র যৌথ সম্পাদনায় ‘সংবেদ’ নামে কথাসাহিত্য বিয়য়ক একটি ছোটকাগজ প্রকাশিত হতো।

চা-পর্ব শেষে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার চা-পর্ব। দুপুরের খাবারের পর চা খাই না- বলার পরও শোয়েব শাদাব জোড় করে আবার চা আনালেন। ইতিমধ্যে দুপুরের খাবারের আগে অনেকক্ষণ নোমান ভাই তার সাথে নিয়ে আসা শাদাবের ‘অশেষ প্রস্তর যুগ’ থেকে অনেকগুলো কবিতা পড়িয়ে শোনালেন। শাদাব খুবই আপ্ল‍ুত। মনোযোগ দিয়ে নোমান ভাইয়ের পাঠ শুনছে এবং মাঝে মাঝে নিজেই দু’এক পঙক্তি উচ্চারণ করছে। নোমান ভাই কৌশলে শাদাবকে দিয়ে উচ্চারণ করিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয় একজন তরুণ কবিকে আমরা পেয়েছি বাড়িতে ঢুকার পরই। খলিল তার নাম (পুরো নাম মনে নাই)। স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। আশিককে দেখেই চিনে ফেললো খলিল, তার ফেসবুক ফ্রেন্ড এবং এখানে আসার আগের দিন আশিক সাকোয়া যাচ্ছে বলে ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছে তা দেখে খলিলও এসেছে আশিকের সাথে দেখা করার জন্য। আমার নাম শুনে জানালো যে আমাকেও সে নামে চেনে। রোজার পর সাকোয়াতে কবিতা উৎসব করার বিষয়ে খলিল সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিলো। খলিল প্রায়ই শোয়েব শাদাবের সাথে দেখা করতে আসে এ বাড়িতে এবং তার সঙ্গ খুব পছন্দ করে শাদাব।

বিদায়ের মুহূর্তটি যেনো কেমন বিষাদগ্রস্থতায় আমাদের পেয়ে বসলো। শোয়েব শাদাব ছাড়তেই চায় না আমাদেরকে। গাড়ি ছাড়ার মুহূর্তেও আমাকে আকুতি কণ্ঠে বারবার বলছেন- শামীম ভাই আবার আয়ুনযে!

Advertisement
Share.

Leave A Reply