আনু মুহাম্মদের জন্ম ১৯৫৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও সর্বজনকথা পত্রিকার সম্পাদক। তার লেখা প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪০। অ্যাকটেভিস্ট আনু মুহাম্মদ তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গতকাল পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ৫ শ্রমিক। এ ঘটনায় রবিবার (১৮ এপ্রিল) বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ দুটি আলাদা মামলা দায়ের করে। এতে ‘অজ্ঞাতনামা আসামী’ করা হয় প্রায় আড়াই হাজারজনকে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গতকালের ঘটনা ও আজকের মামলা প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তার মতামত জানিয়েছেন বিবিএস বাংলা’কে।
বাঁশখালীর কালকের হত্যা নতুন নয়। এখানে ২০১৬ সালেও রক্ত ঝরেছিলো। তখন মারা যান ৪ জন। আহতদের হিসেব হয়তো কেউ রাখেনি।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন একটি পরিবেশবিনাশী ও প্রাণঘাতি তৎপরতা। গতকালের প্রাণহানিতে প্রমাণ হলো কার্যক্রম শুরুর আগেই এটি প্রাণঘাতি। এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দাঁড়িয়ে আছে বন্দুকের নলের ওপর।
আমরা এই বাঁশখালীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে অনেক আগেই গবেষণা করেছি। তাতে দেখেছি, এই পুরো প্রকল্পটি দাঁড়িয়ে আছে মিথ্যাচারের ওপর। ভূমি অধিগ্রহন থেকে শুরু করে এর প্রতি পরতে পরতে মিথ্যাচার আর অস্বচ্ছতা। প্রথমে স্থানীয়দের বলা হয়, এখানে গার্মেন্ট শিল্প হবে। পরে বলা হয়, চিংড়ির ঘের হবে। কারণ, রামপালের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের মানুষ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেনে নেবে না এটি জানা কথা। শুরু থেকে এ প্রকল্পটি নিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। মানুষ বারবার বিক্ষোভ করেছে এ নিয়ে। তখন পুলিশের সঙ্গে এলাকায় যৌথ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত এস আলম গ্রুপ ও একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। এই এস আলম গ্রুপ দেশে একটি কুখ্যাত প্রতিষ্ঠান। এরা ঋণ খেলাপী। এরা আইনের তোয়াক্কা করে না। এই এস আলম গ্রুপ ও চীনা কোম্পানি মিলে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের মাধ্যমে এখানে কয়লাাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চায়।
এবার আসি মামলার প্রসঙ্গে। আমরা জেনেছি গতকালের ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। এতে প্রায় আড়াই হাজারজনকে ‘অজ্ঞাতনামা আসামী’ করা হয়েছে। এতে শ্রমিক খুনের বিচার তো হবেই না, বরং স্থানীয় মানুষ আক্রান্ত হবেন ব্যাপকমাত্রায়। পুলিশের বাণিজ্য শুরু হবে। জনপদ জুড়ে ভয়ের সংস্কৃতি জারি হবে। কারণ, আমরা জানি বাংলাদেশে আইন কখনোই সঠিক গতিতে চলে। ক্ষমতাসীনদের মর্জিমাফিক চলে এসব।
আর একটি ঘটনা আমি জেনেছি। সেটা হলো, নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিকরা ইফতারের এসময় এক ঘন্টা কর্মবিরতি চেয়েছিলেন। আমি মনে করি এটি ন্যায্য দাবী। একজন রোজাদারের ইফতার করার অধিকার আছে। আবার একই সঙ্গে রোজা না পালনের অধিকার মানুষের আছে। সারাদেশই ইফতারের সময়কে সম্মান জানিয়ে কাজে বিরতি দিয়ে থাকে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, এ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়াটি একটি এক্সট্রিম কেস। এখানে শ্রমিকদের বেশি খাটানো হতো। বেতন ও ওভারটাইমও ঠিক মতো দেয়া হতো না। ইফতারের বিরতি না দেয়া তারই প্রমাণ। তাই এটি স্পষ্ট যে, এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও অসঙ্গতি আছে। এ নিয়ে ক্ষোভের কারণ তাই ন্যায় সঙ্গত।