বয়–বেয়ারার দেখা নেই, ক্যাশ কাউন্টারের হাঁকডাক কিংবা বেলের ক্রিং ক্রিং শব্দও নেই, নেই সুসজ্জিত টেবিলে খাওয়ার ধুম। হোটেল বলতে যে পাঁচমিশালি কথার হট্টগোল, সেসবের বালাইও নেই সেখানে। বলতেই পারেন, এটা আবার কেমন হোটেল? হ্যা এমনই এক হোটেলে খাবার মেলে পেট পুরে। যেখানে বিলের বিনিময়ে জমা রাখা হয় একটি ভালো কাজের গল্প।
মানুষতো সারাদিন কতো কাজ করে, তার মধ্যে ভালো কাজের চেষ্টা থাকে নিশ্চয়ই। আর সেই ভালো কাজে আরও উৎসাহ জোগাতে ঢাকায় একদন তরুণ খুলেছেন ভালো কাজের হোটেল। এখানে অসহায় মানুষেরা একটি ভালো কাজের কথা বলে একবেলা পেট পুরে খাবার খেতে পারেন।
এই হোটেলের মেহমানরা এসেই বসে পড়েন ফুটপাতে। অপেক্ষা করতে থাকেন কখন ডাক পড়বে তাদের। কিছুটা অপেক্ষার পর খাবার খেয়ে প্রশান্তির ঢেকুর তোলেন তারা। কেউ বলেন আজ কোন ভালো কাজ করতে পারিনি। আবার কারও মুখে নানা ভালো কাজের গল্প। যেমন রমিজ মিয়া একজন রিকশা চালক তার আজকের ভালো কাজ ছিল। একজনকে টাকা নেই তারপরেও তার রিকশায় করে গন্তব্য পৌঁছে দিয়েছেন।
আবার রফিক বললেন এক মামা রিকশায় উঠে ভাড়া দেবার সময় ভুলে টাকা বেশি দিয়ে গেছে, তার টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি। এমন অসংখ্য ভালো কাজের গল্পে ভরা লোকদের ভীর এই হোটেলে।
ভালো কাজের এই হোটেলে ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়ার পাশাপাশি খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয় কে কি ভালো কাজ করলেন। তবে আজ ভালো কাজ না করতে পারলেও খাবার পাবেন যে কেউ। সেজন্য আজ বা কাল তাকে যে কোনো একটি ভালো কাজ করতে হবে। এ শর্তেই খাবার দেয়া হয় এই ভালো কাজের হোটেলে। হোটেলের সাথে জড়িতরা বলছেন এমন হাজারো অসহায় মানুষকে একবেলা বিনা মূল্যে খাবার দিতে পেরে ভালো লাগে। বিনিময়ে তাদের সারাদিনে অন্তত একটি ভালো কাজে উৎসাহিত করা হয়।
এই মেহমানদের কারও মুখে নিঃস্ব মানুষকে বিনা পয়সায় গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার প্রশান্তি। কেউবা বললেন, কোনো ভালো কাজই করেননি তিনি। স্বেচ্ছাসেবী তরুণ উত্তর লিখে রাখলেন খাতায়। তারপরই তুলে দেওয়া হলো খাবারের প্যাকেট। ক্ষুধার্ত মানুষটির মনোযোগ তখন প্যাকেটের ডিম-খিচুড়িতে।
এই অতিথিদের মধ্যে কেউ রিকশাচালক, কিংবা অসহায় পথচারী, আবার কেউবা ভবঘুরে। শনি থেকে বৃহস্পতি, সপ্তাহে ৬দিন অসহায় মানুষকে অন্তত একটি ভালো কাজের বিনিময়ে খাবার দেয় এই ভালো কাজের হোটেল। প্রতিদিন রান্না হয় ৭০ কেজি চাউলের ভাত। তাতে খেতে পায় ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষ। বনানী, মগবাজার, কমলাপু ও মালিবাগে বিভিন্ন সময় মেনে অসহায় মানুষদের একবেলা খাবার খওয়ায় এই ভালো কাজের হোটেল।
এই হোটেলের উদ্যোক্তা ‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’নামের একটি ফেসবুকভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম। যেখানে যুক্ত আছেন প্রায় ১৭শো মানুষ। তাঁরা প্রতিদিন ১০ টাকা করে জমা রাখেন। তাদের উদ্দেশ্য, সমাজের অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ানো আর অবশ্যই সেই মানুষগুলো যেন সারাদিনে একটি হলেও ভালো কাজ করেন।
https://www.facebook.com/bbsbangla.news/videos/1189391754945094