দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তলব করা হয়েছে এনআরবি ব্যাংকের তিন পরিচালকসহ ৪ জনকে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগামী ১ফেব্রুইয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় (দুদক) কার্যালয়ে এনআরবি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার আমিনুর রশিদ খান ও তার দুই ছেলে এবং ব্যাংকটির আরেক পরিচালক ইদ্রিস ফরাজীকে সকাল সাড়ে ৯টায় হাজির হতে বলা হয়েছে।
দুদক সূত্র বলছে, বেসরকারি খাতে নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে এনআরবি ব্যাংকের তিন পরিচালককে অনুসন্ধানের জন্য তলব করা হয়েছে। এছাড়া এনআরবি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার আমিনুর রশিদ খান, তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে বলেও জানায় (দুদক)। আর এইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য সম্প্রতি দুই সদস্যের টিম গঠন করে দুদক।
সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হককে প্রধান করে গঠিত এ টিমে সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে উপসহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান ও মিরাজ হোসেনকে। ওই টিম গঠনের পরই তারা সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে বিএফআইইউ-এর মহাব্যবস্থাপকের কাছে তথ্য চেয়ে ১৩ জানুয়ারি একটি চিঠিও দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, এনআরবি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার আমিনুর রশিদ খান ও তার দুই ছেলে এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক নাফিহ রশিদ খান ও নাভিদ রশিদ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিসহ অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ক্রয়সহ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
এ অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে উল্লিখিত ব্যক্তি বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে দেশে কিংবা বিদেশের কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো চলতি, সঞ্চয়ী, এফডিআর, শেয়ার, লকারসহ অন্যান্য ব্যাংক হিসাব থাকলে সেসবের হিসাববিবরণী এবং কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থাকলে তার বিশদ বিবরণসহ এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
এ কারণে তাদের নামে হিসাব পাওয়া গেলে হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল, টিপি, এনআইডি, পাসপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স, আরজেএসসির নিবন্ধন, টিআইএন সার্টিফিকেট, হিসাববিবরণীসহ সংযুক্ত সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি রেকর্ডপত্রের ফটোকপি ৩০ জানুয়ারির মধ্যে দুদক কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।
ওই চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-দেশ ট্রেডিং করপোরেশন, বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জাব্বার জুট মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লিমিটেড, হাইড্রোকার্বন এবং এম ইশরাত হিমাগার লিমিটেড। এর বাইরে বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামও দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকের ওয়েবসাইটে তার পরিচিতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা পারিবারিকভাবে এশিয়ার বৃহত্তর ভোক্তাপণ্যের ট্রেডিং ব্যবসা করেন। তিনি নিজে প্রতিষ্ঠা করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে কমোডিটি ফাস্ট ডিএনসিসি নামের একটি কোম্পানি।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ থেকে পুঁজি নিয়ে বিদেশে কোম্পানি করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের এ ধরনের কোনো অনুমোদন দেয়নি। তাই তারা বিদেশে অর্থ আয় করে থাকলে উপার্জিত অর্থ দেশে আনা উচিত ।
তবে সেগুলোও তারা দেশে আনেননি। আর এই কারণে দেশে কিংবা বিদেশে অর্জিত অর্থ যাই হোক,তা গোপন করে পাচার করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে দুদক।
এ বিষয়ে দুদক থেকে তাদেরকে সম্পদবিবরণী দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলে তারা প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন ।