একটা সময় পর্যন্ত সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারি নিয়ে আতঙ্ক ও ভুল ধারণা ছিল। এখন তা অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে কতবার ডেলিভারি করা যায় এবং অধিক সিজারের ক্ষতি সম্পর্কে জানেন না অনেকেই।
স্বাভাবিক ডেলিভারি ঝুঁকিপূর্ণ হলে মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারির প্রয়োজন হয়। সিজারিয়ান এখন খুব সাধারণ বিষয়ে পরিণত হলেও এটি আসলে একটি বড় অপারেশন। তাই এর আছে নিজস্ব কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
আগে জেনে নিন, কি কি জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকেরা স্বাভাবিক ডেলিভারির বদলে সিজারিয়ান ডেলিভারির পরামর্শ দেন।
১. নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরও যদি প্রসব ব্যথা শুরু না হয়
২. কোনো কারণে শিশুর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে
৩. প্রসব ব্যথা ৮-১২ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরেও যদি প্রসবের উন্নতি না হয়
৪. গর্ভফুলের অবস্থান জরায়ুর মুখে থাকলে
৫. প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মা ও শিশুর জীবনের ঝুঁকি তৈরি হলে
৬. গর্ভের শিশুটি যদি অস্বাভাবিক অবস্থানে থাকে
৭. প্রথম এক বা দুটি শিশুর জন্ম যদি সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হয়ে থাকে।
চিকিৎসকেরা দুই বারের বেশি সিজারে যেতে নিরুৎসাহিত করেন। তবে সর্বোচ্চ তিনবার, এর বেশি কোনভাবেই নিরাপদ নয়। তিনবার সিজারের পর চতুর্থবার গর্ভধারণে বেশকিছু জটিলতা দেয়। এমনকি হতে পারে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুও। যা জানেন না অনেক নারীই।
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম বিবিএস বাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুই বারের বেশি সিজার করার পরামর্শ দেই না। কেউ চাইলে তিন নম্বর বাচ্চা নিতে পারেন। তবে তিনটি সিজারের পর আমরা একেবারেই না করে থাকি। এর কারণ হিসেবে বলবো, তৃতীয় সন্তানও অপারেশনের মাধ্যমে জন্মদানের পর চতুর্থবার গর্ভবতী হলে অনেক সময় জরায়ু ফেটে যেতে পারে, বাচ্চা সেলাইয়ের মধ্যে আটকে যেতে পারে এবং জরায়ু বা পেশাবের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় মায়েদের মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনা ঘটে।’
স্কটল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সিজারিয়ান পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্কুলের পারফরম্যান্স স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের চেয়ে অনেকটাই খারাপ। এর কারণ হিসেবে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অপারেশন করে বাচ্চা বের করা হয় মায়ের প্রসব ব্যথা হওয়ার আগেই, যা বাচ্চার মস্তিষ্ক পরিপূর্ণ হতে সময় দেয় না।
গর্ভাবস্থায় কোনো জটিল সমস্যা সৃষ্টি না হলে, ভ্যাজাইনাল বার্থ বা নরমাল ডেলিভারিই ভালো। নরমাল ডেলিভারি শুধু বর্তমান গর্ভাবস্থার জন্যই নয়, পরবর্তী গর্ভধারণ ও মায়ের সুস্বাস্থ্যের জন্যেও অনেকটাই নিরাপদ, বলছেন গাইনি বিশেষজ্ঞরা।