পুনরায় আড্ডা, বোঝাপড়া হলো না। ভাবতাম, হবে। রাজশাহী গেলেই এবার বসব আপনার সঙ্গে, স্যার। কিন্তু তা আর হবে না, আর হবে না।
খুলনা আর্ট কলেজে ছিলাম যখন, কথা অনুযায়ী আপনি রাজশাহী থেকে ১০ কপি ‘প্রাকৃত’ পাঠালেন আমার ঝিনাইদহের বাড়ির ঠিকানায়। প্রতি কপি মূল্য ৩৫ টাকা। সেগুলো খুলনা ও ঝিনেদায় বিক্রি করে সেই ৩৫০ টাকা আর আপনাকে পাঠাতে পারলাম না। বন্ধুরা কয়েকজন কয়েকদিন চা পুরি খেয়েই শেষ। আপনাকে সব লিখলাম চিঠিতে। ফেরৎ ডাকে আপনি লিখলেন, ‘টাকা লাগবে না, আমার জন্যে ‘স্পার্টাকাস’ দুই পার্ট ভিসিডি কিনে রেখো, এবার ফুলতলা বা খুলনায় গেলে দিও।’ আপনার সম্পাদিত ছোটগল্পের কাগজ ‘প্রাকৃত’তেই প্রথম শহীদুল জহির পড়ি আমি। সে ছিল ‘ডুমুরখেকো মানুষ।’
ঢাকায় আপনার সঙ্গে আমার স্মৃতি কম। ওই যে টিএসসি গেস্ট হাউসে উঠতেন রাজশাহী থেকে এলে, তখন আমিও ইউনিভার্সিটির হলে থাকতাম, দেখা হতো। এই তো! এ বাদে টুকটাক কোনও অনুষ্ঠানে দেখা হয়তো হতো, কথা সেভাবে আর হয়ে ওঠেনি। পত্রিকার পাতায় হাসান আজিজুল হকের গল্পের আশেপাশে যেমন কবিতাও ছাপা হয়, সেভাবেই কতশতবার আমার কবিতাও ছাপা হয়েছে। তার মধ্যদিয়েই কি আমাদের যোগাযোগ হতো? দেখা হতো? কথা হতো?
বাংলা কথাসাহিত্যে আপনি এক মহান কারিগর। অসীম শ্রদ্ধা আপনাকে, হাসান আজিজুল হক। কখনো আপনার স্নেহসান্নিধ্য জুটেছে আমারও, সে এক অর্জন। ইশ, এই অর্জন যদি আরও বেশি হতো! এই মুহূর্তে ‘বিজ্ঞাপনপর্ব হাসান আজিজুল হক সংখ্যা’ যদি হাতের কাছে থাকত! ওটা আছে আমাদের ঝিনেদার বাড়িতে, আলমারির মধ্যে। ওখানেই আছে ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ ‘নামহীন গোত্রহীন’ ‘অতলের আধি’ ‘পাতালে হাসপাতালে’। ‘আগুনপাখি’ কেন যে এখনো পড়িনি!
রাঢ়বঙ্গ থেকে সমগ্র বঙ্গে আপনি ব্যাপৃত আজ। বঙ্গের বাইরেও ব্যাপ্ত হয়েছেন, হতেই থাকবেন, সেই সাহিত্যকর্মের রূপকার আপনি, হাসান আজিজুল হক। আপনার কর্মেই আপনি স্মরণীয় থাকবেন, স্যার। সালাম আপনাকে।