‘এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি পরে রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে’
শুধু নিজের এই গানে আর কথায় নয়, সত্যিই এ ভুবন ছেড়ে অনেক আগেই চলে গেছেন গীতিকার, সুরকার, বাউল শিল্পী, কবিয়াল বিজয় সরকার।
১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিত্বের জন্ম ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯০৩ সালে নড়াইলের ডুমদী গ্রামে। তাঁর আসল নাম বিজয় কৃষ্ণ অধিকারী।তবে স্থানীয় ও পরিচিত জনেদের কাছে তিনি ‘পাগল বিজয়’ নামে পরিচিত। বহু জনপ্রিয় গান রয়েছে তাঁর।
এর মধ্যে, পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই ঠিক রবে সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে, পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে, তুমি জানো না রে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা, আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে’ প্রভৃতি অন্যতম।
তাঁর পিতার নাম নবকৃষ্ণ বৈরাগী ও মাতার নাম হিমালয়া কুমারী । তিনি স্থানীয় টাবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে নেপাল বিশ্বাস নামক একজন শিক্ষকের কাছে যাত্রাগানের উপযোগী নাচ, গান ও অভিনয় শেখেন বিজয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি স্কুল পাল্টান। প্রায় সবখানেই তিনি এমন এক বা একাধিক শিক্ষক পান, যাদের কাছে তিনি গান শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। অল্প বয়সে পিতামাতা হারানোয় তার লেখাপড়া বেশিদূর এগোয়নি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি লেখাপড়া করেন।
এরপর তিনি স্থানীয় স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতার কাজ করেন পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের লোক ও আধুনিক গান চর্চা করতেন । গোপালগঞ্জের কবিয়াল মনোহর সরকারের কাছে কবিগান শেখেন। কিছুদিন পর তিনি রাজেন্দ্রনাথ সরকারের সংস্পর্শে আসেন এবং তার কাছেও কবিগানের তালিম নেন।
বিজয় সরকার নিজের একটি গানের দল করেন এবং কবিয়াল হিসেবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নিজেই গানের কথা এবং সুর করতেন। ভাটিয়ালী সুরের উপর ভিত্তি করে তার ধুয়া গানের জন্য তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা পান। সেই সময়ে তিনি রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, আব্বাসউদ্দীন আহমদ প্রমুখের সান্নিধ্যে লাভ করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতে তিনি আনুমানিক ৪০০০ আসরে কবিগান পারিবেশন করেন। এছাড়া তিনি রামায়ণ গানও পরিবেশন করতেন।
বিজয় সরকার-এর পারিবারিক উপাধি ছিল বৈরাগী। তিনি নিজে বৈরাগী উপাধি ত্যাগ করে অধিকারী উপাধি গ্রহণ করেন। কবিয়াল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করার পর তিনি অবশ্য বিজয় সরকার নামে পরিচিত। প্রয়াণ দিবসে অজর শ্রদ্ধা এই মানুষটির প্রতি।
।