fbpx

করোনার অজুহাতে খর্ব হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সময়টা ২০২০ সালের এপ্রিল। ভারতে তখন করোনা বিস্তার শুরু হয়েছে। এই মাসেরই ১০ তারিখ দেশটির নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ার অভিযোগে আটক হন জাফরা জারগার নামের এক নারী। তখন তিন মাসের অন্ত:সতত্ত্বা ছিলেন তিনি।

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, গর্ভাবস্থায় জনসমাবেশে আসায় ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ছিল তার। এ জন্যই তাকে আটক করা হয়েছে। দুই মাসেরও বেশি সময় তাকে আটক রাখা হয়েছিল দিল্লির তিহার জেলে।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে তিনি জানান- ‘তারা জেলের অন্য বন্দিদের বলে দিয়েছিল আমার সাথে কথা না বলতে। বলা হয়েছিল আমি সন্ত্রাসী, যে হিন্দুদের হত্যা করতো। তবে তারা জানতো না যে, বিক্ষোভে অংশ নেয়ার জন্য আমাকে আটক করা হয়েছে।’

করোনার অজুহাতে খর্ব হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা

গর্ভাবস্থাতেই জাফরা জারগারকে দিল্লির তিহার জেলে দুই মাস বন্দি রাখা হয়েছিল।
ছবি: সংগৃহীত

সমালোচকরা বলছেন, বিক্ষোভ থামতেই এমন মিথ্যের আশ্রয় নেয়া হয়েছিল। এবং জাফরার মুক্তির দাবিতে রাজপথে এরপর কোনো আন্দোলনও হয়নি। কারণ সে সময় করোনা মোকাবেলায় বিশ্বের অনেক দেশের মতো ভারতেও কড়া লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ে আলোচিত আটকদের মধ্যে জাফরাও এক জন।

শুধু ভারতে নয়, করোনাকালীন লকডাউন ও কড়াকড়িকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এমন স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে এশিয়ার প্রায় সব দেশেই। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই অঞ্চলের অনেক সরকারই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ফুসে ওঠা বিক্ষোভ- প্রতিবাদ ধামাচাপা দিতে করোনাভাইরাসকে ব্যবহার করেছে। আটক করা হয়েছে বিরোধীদের। অন্যদিকে, করোনাকালীন অভিযান চালানোর লেবাস নিয়ে অনেক সরকারেরই জনপ্রিয়াতা বেড়েছে।

জোসেফ বেনেডিক্ট নামের এক মানবাধিকার কর্মী বিবিসিকে বলেন- ‘ভাইরাস একটি শত্রু। সরকার মহামারির বিরুদ্ধে ‘লড়াই’- এর নামে মানুষের ওপর অত্যাচারের আইন পাশ করছে’ তিনি জানান এতে মানবাধিবার খর্ব হচ্ছে।

এমন ঘটনা হয়েছে ফিলিপাইনেও। ৬২ বছর বয়সী মানবাধিকার কর্মী তেরেসিটা নাউল। অপহরণ, অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগে আটক হন তিনি। শীর্ষস্থানীয় “কমিউনিস্ট নেতা” হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে প্যারেড করা নউল ছিলেন এই অভিযোগ আনা ৪০০ জনের মধ্যে এক জন। জারা আলভারেজ ও র‌্যান্ডাল ইচানিসের মতো অনেকেই এ সময় হামলা ও হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে, করোনাকালীন পদক্ষেপ নেয়ায় এখানেও আগের থেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রেসিডেন্ট রোদ্রিগো দুতার্তে।

করোনার অজুহাতে খর্ব হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সরকার মহামারির বিরুদ্ধে ‘লড়াই’- এর সুবিধা নিচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

নেপালের আদিবাসী নেওয়ার সম্প্রদায়ের মানবাধিকার কর্মী বিদ্যা শ্রেষ্ঠ বিবিসিকে বলেন, ‘গোষ্ঠীটিকে নির্যাতনের জন্য সরকার মহামারিকে ব্যবহার করছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে এই সময় কাঠমণ্ডু উপত্যকায়র নেওয়ারের ঐতিহ্যবাহী ৪৬টি বাড়ি ভেঙে নতুন রাস্তা তৈরি করছে।’

তবে জনসমাগম থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে এ বিষয়ে বাসিন্দাদের প্রতিবাদেও সামিল হতে দেয়া হচ্ছে না।

থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশেই মাহামারির নাম করে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ, বা দাবি-দাওয়া আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারও মহামারির অজুহাতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ দিয়ে সমালোচিত হয়েছে। বৈশ্বিক এই সংকটকে পুঁজি করে সুবিধা নিচ্ছে সরকার। খর্ব হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply