করোনার আঘাতে ব্যবসা এগিয়ে নিতে এখনও আস্থা পাচ্ছেন না ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উদ্যোক্তারা। দেশের ৩০ ভাগেরও বেশি এসএমই বিনিয়োগকারীর এখন এ অবস্থা। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান (সানেম)-এর এক অনলাইন তথ্যে এমনটাই বলা হয়েছে ।
তথ্যে জানা যায়, প্রথম ধাপে করোনার প্রকোপ কমার পর দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিছুটা শুরু হলেও গতি আসেনি আগের মতো। এর মধ্যে আবার করোনার দ্বিতীয় ধাপ চলছে এখন দেশে। এ মহামারীর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এই এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও গতি নেই অর্থ ছাড়ে।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই ৩ মাসে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়ে মাঠ পর্যায়ের তথ্য-উপাত্ত যাচাই শেষ এমন তথ্য দিয়েছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের প্রতিষ্ঠান (সানেম) । বিনিয়োগকারীদের আস্থার পরিস্থিতি জানতে ৫০০ টির বেশি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে গবেষণা করে প্রতিষ্ঠানটি।
গবেষণা তথ্য বলছে, করোনাকালে ব্যবসা চালাতে গিয়ে উচ্চ পরিচালন ব্যয়, কর জটিলতা , অবকাঠামোগত সমস্যার মতো প্রতিবন্ধকতাগুলো বেড়েছে।
এবার করোনার দিত্বীয় ধাপে আবারো বড় ধরণের ক্ষতি সামলাতে হবে বলেও মনে করেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের ( সামেন) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, ‘মুনাফা অর্জনই যদি একমাত্র লক্ষ্য হয়ে থাকে, তবে স্বাভাবিকভাবেই তা অন্য কিছু দেখে না। তবে এই মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও মনে রাখা সম্ভব। মানুষ দুর্যোগের সময় সত্যকে উপলব্ধি করলেও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে তা ভুলে যায়। তাই এই মহামারী চলে গেলেও এর শিক্ষা ব্যবসায়ীরা কতটা মনে রাখবে সে বিষয়ে তিনি সন্দিহান।
ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাকালে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাটাই মূল চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঋণের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করার সঙ্গে ব্যবসায়িক খরচ কমানোর দাবিও করেন তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান জানান, করোনা পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে অনেক ব্যবসার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। যেমন- ই-কমার্স, আইসিটি, টেলিকমসহ ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা। এসব ক্ষেত্রে সরকারের পলিসি সাপোর্ট থাকতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের দিক নির্দেশনা থাকলে সম্ভাবনাকে আরো ভালভাবে কাজে লাগানো যাবে।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতে কর্মসংস্থান ধরে রাখাই হলো বড় চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি ও বিনিয়োগ বাড়ানোটাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সরকারের কাছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ট্যাক্স ছাড় দিতে বলেছি। আর যদি আমরা কর্মসংস্থান ধরে রাখতে পারি তাহলে আরও ২ শতাংশ ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার কথা বলেছি।
করোনাকালে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারকে আরো বেশি সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।